আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 9, আত তাওবা - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 9, আত তাওবা



মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১২৯, রুকু সংখ্যা: ১৬

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-৩৭মক্কা বিজয়ের পর মুশরিকদের সাথে আচরণের বিস্তারিত নীতিমালা।
৩৮-৪২তবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণে মুনাফিকদের ওজর-বাহানা। মুমিনদের প্রতি অংশগ্রহণের নির্দেশ।
৪৩-৫৯তবুক যুদ্ধে মুনাফিকদের অংশগ্রহণ না করার তীব্র সমালোচনা এবং তাদের প্রতি ভৎর্সনা।
৬০যাকাত কারা পাবে ?
০৬১-০৭০মুনাফিকদের নিকৃষ্ট নীতির সমালোচনা।
০৭১-০৭২মুমিন পুরুষ ও নারীরা পরস্পরের অলি এবং তাদের শুভ পরিণাম।
০৭৩-১১০যুদ্ধ ও জিহাদের ব্যাপারে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। মুনাফিকদের বাড়াবাড়ি।
১১১-১২৯মুমিনদের মহোত্তম গুণাবলি। মুশরিকদের জন্য নবীর ক্ষমা প্রার্থনা করা নিষেধ। মুমিনদের প্রতি আল্লাহর ক্ষমা ও নির্দেশাবলি। আল্লাহর রসূলের অনুপম গুণাবলি।
9-1 : এটি সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেইসব মুশরিকদের প্রতি, যাদের সাথে তোমরা পারস্পারিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে।
9-2 : অতএব (হে মুশরিকরা) তোমরা এ দেশে আর চারমাস ঘুরে বেড়াতে পারবে, আর জেনে রাখো, আল্লাহকে অতিক্রম করার সাধ্য তোমাদের নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের লাঞ্ছিত করেন।
9-3 : মহান হজ্জের দিনে আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা যাচ্ছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুশরিকদের ব্যাপারে দায়মুক্ত এবং তাঁর রসূলও। এখন (হে মুশরিকরা) তোমরা যদি তওবা করো, তাতেই রয়েছে তোমাদের কল্যাণ, আর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রাখো, তোমরা আল্লাহকে অতিক্রম করতে (পালাতে) পারবে না। আর কাফিরদের সংবাদ দাও বেদনাদায়ক আযাবের।
9-4 : তবে মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ এবং তারা চুক্তি কোনো প্রকার লংঘন ও ভঙ্গ করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকেও সাহায্য করেনি, তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত চুক্তি বহাল রাখবে। কারণ, আল্লাহ মুত্তাকিদের (ন্যায়পরায়ণদের) ভালোবাসেন।
9-5 : তারপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো শেষ হয়ে যাবে, তখন মুশরিকদের (দেশের মধ্যে) যেখানে পাবে হত্যা করবে, তাদের বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রতিটি ঘাটিতে তাদের জন্যে ওঁৎ পেতে থাকবে। অবশ্য যদি তারা অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তাদের রাস্তা খোলা রাখো। কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াময়।
9-6 : মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাকে আশ্রয় দাও, যাতে করে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়। তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেবে। কারণ তারা এমন লোক, যারা জানেনা।
9-7 : আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে কী করে মুশরিকদের চুক্তি বহাল থাকতে পারে, তাদের ছাড়া যাদের সাথে তোমরা মসজিদুল হারামের কাছে পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে (যদি তারা তোমাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির উপর কায়েম না থাকে)। তবে, তারা যতোদিন তোমাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির উপর কায়েম থাকবে, ততোদিন তোমরাও তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির উপর কায়েম থাকবে। অবশ্যি আল্লাহ মুত্তাকিদের পছন্দ করেন।
9-8 : কী করে থাকবে? তারা যদি তোমাদের উপর জয়ী হয়, তবে তারা তো তোমাদের সাথের আত্মীয়তাঅঙ্গীকারের কোনোই মর্যাদা দেয়না। তারা মুখে তোমাদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে, অথচ তাদের অন্তর তা অস্বীকার করে। তাদের অধিকাংশই ফাসিক - সীমালংঘনকারী।
9-9 : তারা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে আল্লাহর আয়াত এবং বাধা সৃষ্টি করে আল্লাহর পথে। নিশ্চয়ই তাদের কর্মকান্ড খুবই নিকৃষ্ট।
9-10 : তারা কোনো মুমিনের সাথে আত্মীয়তাঅঙ্গীকারের মর্যাদা রক্ষা করেনা। তারা আসলেই সীমালংঘনকারী।
9-11 : তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই। জ্ঞানী লোকদের জন্যে এভাবেই আমরা আমাদের আয়াত সবিস্তারে বর্ণনা করি।
9-12 : চুক্তি সম্পাদনের পর তারা যদি তোমাদের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দীন নিয়ে বিদ্রুপ করে, তবে কুফরের (পতাকাবাহী) নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যাতে তারা বিরত হয়, কারণ তাদের কোনো অঙ্গীকার নেই।
9-13 : তোমরা কি সেই লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেনা, যারা নিজেদের অঙ্গীকার ভেঙ্গে ফেলেছে এবং রসূলকে বহিষ্কারের সংকল্প করেছিল? আর তারাই তো প্রথমে তোমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তোমরা কি তাদের ভয় করছো? অথচ আল্লাহই তো সর্বশ্রেষ্ঠ অধিকারী যে তোমরা তাঁকে ভয় করবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
9-14 : তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করবেন এবং মুমিনদের হৃদয়কে নিরাময় করে দেবেন,
9-15 : আর তিনি তাদের (মুমিনদের) অন্তরের ক্ষোভ দূর করে দেবেন। যাকে ইচ্ছা আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ অতীব জ্ঞানী, বিজ্ঞানময়।
9-16 : তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমাদের এতোটুকুতেই ছেড়ে দেয়া হবে, অথচ আল্লাহ এখন পর্যন্ত বাস্তবে জেনে নেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুমিনদের ছাড়া অন্য কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেনি? আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন তোমরা যা আমল করো।
9-17 : আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করা মুশরিকদের কাজ নয়, কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের কুফুরির সাক্ষী। তারা এমন লোক যাদের সমস্ত আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে। জাহান্নামেই তারা স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।
9-18 : আল্লাহর মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ করবে তারা, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, আখিরাতের প্রতি, যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করেনা। আশা করা যায় এরা হিদায়াতের পথে চলবে।
9-19 : তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো আর মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে ঐসব লোকদের কাজের সমান গণ্য করছো, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, আখিরাতের প্রতি এবং জিহাদ করেছে আল্লাহর পথে? আল্লাহর কাছে এরা উভয়ে সমতুল্য নয়। আল্লাহ যালিমদের সঠিক পথ দেখান না।
9-20 : যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, আল্লাহর কাছে তারা শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী এবং তারাই হবে সফলকাম।
9-21 : তাদের প্রভু তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর রহমতের, তাঁর রেজামন্দির আর সেই জান্নাতের, যেখানে আছে তাদের জন্যে স্থায়ী নিয়ামত।
9-22 : সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।
9-23 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের বাবা ও ভাইদের অলি (অভিভাবক ও বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করোনা, যদি তারা ঈমানের উপর কুফুরিকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়। তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাদের অলি বানাবে তারা যালিম হিসেবে গণ্য হবে।
9-24 : হে নবী! তাদের বলো: ‘‘যদি তোমাদের কাছে আল্লাহর চাইতে, তাঁর রসূলের চাইতে এবং তাঁর পথে জিহাদের চাইতে বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, সন্তান, ভাই, স্ত্রী, আত্মীয় - স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা - বাণিজ্য যার মন্দাকে তোমরা ভয় পাও এবং তোমাদের প্রিয় বাসস্থান, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর ফায়সালা আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসিক লোকদের সঠিক পথ দেখান না।’’
9-25 : আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন বহু জায়গায় এবং হোনায়েনের (যুদ্ধের) দিনও, যখন তোমাদের আনন্দিত করেছিল তোমাদের সংখ্যার আধিক্য। কিন্তু তা তোমাদের কোনো কাজে আসেনি। এমন কি, ভূ - খন্ড বিস্তৃত থাকা সত্ত্বেও তোমাদের জন্যে সংকীর্ণ হয়ে আসছিল, অত:পর তোমরা পিছু হটে গিয়েছিলে।
9-26 : অবশেষে আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর রসূল ও মুমিনদের প্রতি নাযিল করেন প্রশান্তি, আরো নাযিল করেন এমন এক বাহিনী, যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। পক্ষান্তরে তিনি কঠিন শাস্তি প্রদান করেন কাফিরদের। এটাই কাফিরদের কর্মের প্রতিদান।
9-27 : এরপরও আল্লাহ যাকে চান তার তওবা কবুল করবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়াময়।
9-28 : হে ঈমানদার লোকেরা! মুশরিকরা অপবিত্র। সুতরাং এবারের পর তারা যেনো আর মসজিদুল হারামের কাছেও না আসে। তোমরা যদি দারিদ্রের আশংকা করো, তবে আল্লাহ চাইলে তাঁর নিজ অনুগ্রহে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়।
9-29 : যাদের প্রতি ইতোপূর্বে কিতাব নাযিল করা হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনেনা আল্লাহর প্রতি, আখিরাতের প্রতি এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা কিছু হারাম করেছেন, তা হারাম হিসেবে মানে না, আর সত্য দীনের আনুগত্য অনুসরণ করেনা, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা নত হয়ে নিজেদের হাতে জিযিয়া (নিরাপত্তা কর) না দেবে।
9-30 : ইহুদিরা বলে, ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র’। নাসারারা বলে : ‘মসিহ্ আল্লাহর পুত্র’। এগুলো তাদের মুখের কথা। এরা তাদের মতোই কথা বলে, যারা ইতোপূর্বে কুফুরি করেছিল। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন! কোন্ দিকে তারা ফিরে যাচ্ছে?
9-31 : তারা আল্লাহ ছাড়া তাদের পন্ডিত এবং সংসার বিরাগীদেরও রব বানিয়ে নিয়েছে এবং মরিয়মের পুত্র মসিহকেও। অথচ তাদেরকে এক ইলাহ্ (আল্লাহকে) ছাড়া আর কারো ইবাদত করতে আদেশ করা হয়নি। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই। তারা যাদেরকে তাঁর শরিক বানায় তিনি তাদের থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
9-32 : তারা আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায় তাদের মুখের ফুৎকারে। অথচ আল্লাহ আর কিছুই চান না তাঁর নূরকে পূর্ণতা দান করা ছাড়া, যদিও কাফিররা তা পছন্দ করেনা।
9-33 : তিনি সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে পাঠিয়েছেন হিদায়াত এবং সত্য দীন নিয়ে অন্যসব দীনের উপর সেটিকে বিজয়ী করার জন্যে, যদিও মুশরিকরা তা পছন্দ করেনা।
9-34 : হে ঈমানদার লোকেরা! জেনে রাখো, পাদ্রী ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই অন্যায়ভাবে মানুষের মাল সম্পদ গ্রাস করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। যারা সোনা রূপা (অর্থ সম্পদ) সঞ্চয় করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা, তাদেরকে সংবাদ দাও বেদনাদায়ক আযাবের।
9-35 : যেদিন সেগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপালে, পাঁজরে এবং পিঠে দাগ দেয়া হবে, সেদিন বলা হবে, এ হলো সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমিয়ে রেখেছিলে, এখন স্বাদ গ্রহণ করো তোমাদের সঞ্চয়ের।
9-36 : আল্লাহর কাছে আসমান ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে গণনায় মাস বারোটি। এর মধ্যে চারটি পবিত্র। এটাই প্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ সময় তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করোনা। আর মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই করো, যেভাবে তারা সর্বাত্মক লড়াই করে তোমাদের বিরুদ্ধে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে রয়েছেন।
9-37 : মাসকে পিছিয়ে দেয়া মূলত কুফুরিকে বৃদ্ধি করা। এর ফলে বিভ্রান্ত করা হয় কাফিরদের। তারা এটাকে কোনো বছর হালাল করে, আবার কোনো বছর করে হারাম। এতে তাদের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ যা হারাম করেছেন সেগুলোকে হালাল করা এবং যেনো আল্লাহ যেগুলো হারাম করেছেন সেগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে। তাদের মন্দ কাজ তাদের কাছে লোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ কাফিরদের সঠিক পথ দেখান না।
9-38 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের কী হলো, তোমাদের যখন আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয়, তোমরা জমিনকে আকড়ে ধরে থাকো? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে রাজি হয়ে গেছো? অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী একেবারেই তুচ্ছ।
9-39 : তোমরা যদি অভিযানে বের না হও, তোমাদের তিনি আযাব দেবেন এক বেদনাদায়ক আযাব। আর তোমাদের বদলে অপর কোনো লোকদের নিয়ে আসবেন এবং তোমরা তাঁর কোনোই ক্ষতি করতে পারবেনা। প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহ শক্তিমান।
9-40 : তোমরা যদি তাকে (নবীকে) সাহায্য না করো, তবে জেনে রাখো, ইতোপূর্বেও আল্লাহই তাকে সাহায্য করেছেন, যখন কাফিররা তাকে বের করে দিয়েছিল এবং সে ছিলো দুইজনের দ্বিতীয় জন। যখন তারা দু’জনেই গুহার মধ্যে ছিলো এবং সে তার সাথিকে বলেছিল, ‘চিন্তা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’ ফলে আল্লাহ তার উপর নাযিল করলেন নিজের প্রশান্তি এবং তাকে সাহায্য করলেন এমন একটি সৈন্যবাহিনী দিয়ে যাদের তোমরা দেখোনি। এর মাধ্যমে তিনি কাফিরদের কথা হেয় করে দিলেন আর উপরে উঠিয়ে দিলেন আল্লাহর বাণীকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।
9-41 : তোমরা অভিযানে বেরিয়ে পড়ো হালকা অবস্থায় এবং ভারি অবস্থায় আর আল্লাহর পথে জিহাদ করো তোমাদের মাল ও জান দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা জানতে!
9-42 : যদি সম্পদ লাভের আশু সম্ভাবনা থাকতো আর সফর যদি হতো সহজ, তাহলে অবশ্যি তারা তোমার অনুসরণ করতো। কিন্তু তাদের কাছে দীর্ঘ পথের যাত্রা কষ্টকর মনে হলো। তারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, ‘সামর্থ থাকলে অবশ্যি আমরা আপনাদের সাথে বের হতাম।’ তারা নিজেদেরই ধ্বংস করছে। আল্লাহ জানেন তারা মিথ্যাবাদী।
9-43 : আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন, তুমি কেন তাদের অব্যাহতি দিলে, যতোক্ষণ না তোমার কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী?
9-44 : যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, তারা নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে যাবার ব্যাপারে তোমার কাছে অব্যাহতি চায়না। আল্লাহ মুত্তাকিদের সম্পর্কে অবহিত।
9-45 : তোমার কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করে তো তারা, যারা আল্লাহআখিরাতের প্রতি ঈমান রাখেনা এবং যাদের অন্তরে বিরাজ করছে সন্দেহ। তারা তাদের সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
9-46 : তারা যদি বের হতে চাইতোই, তাহলে তারা অবশ্যি এর জন্যে প্রস্ত্ততি নিতো। কিন্তু তাদের (মুনাফিকদের) যুদ্ধ যাত্রা আল্লাহই অপছন্দ করেছেন। ফলে তিনি তাদের বিরত রেখেছেন এবং তাদের বলা হয়েছে, ‘বসে থাকাদের সাথে তোমরাও বসে থাকো।’
9-47 : তারা যদি যুদ্ধে বের হতো এবং তোমাদের সাথে থাকতো, তাহলে তোমাদের মধ্যে তারা কেবল বিভ্রান্তি বাড়াতো এবং তোমাদের মাঝে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যেই কেবল ছুটাছুটি করতো। তোমাদের মধ্যেও তাদের কথা শুনার কিছু লোক আছে। আল্লাহ যালিমদের ভালোভাবেই জানেন।
9-48 : এর আগেও তারা ফিতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এবং তোমার অনেক কাজ ওলট - পালট করে দিতে চেয়েছিল, যতোক্ষণ না তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য এসেছে এবং আল্লাহর আদেশ বিজয়ী হয়েছে।
9-49 : তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে বলে, ‘আমাকে অব্যাহতি দিন আমাকে ফিতনায় ফেলবেন না।’ সাবধান, তারা আসলে ফিতনার মধ্যেই পড়ে আছে। অবশ্যি জাহান্নাম কাফিরদের পরিবেষ্টন করবে।
9-50 : তোমার কোনো কল্যাণ হলে তাদের মনে কষ্ট লাগে। আবার তোমার কোনো মসিবত ঘটলে তারা বলে, ‘আমরা আগেই নিজেদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম’ এবং তারা উৎফুল্ল হয়ে কেটে পড়ে।
9-51 : বলো : ‘আল্লাহ আমাদের জন্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া আমাদের আর কিছুই হবেনা। তিনিই আমাদের মাওলা। আর আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল করা উচিত মুমিনদের।’
9-52 : বলো : ‘তোমরা কি আমাদের দুইটি কল্যাণের একটির জন্যে অপেক্ষা করছো? অথচ আমরা অপেক্ষা করছি আল্লাহ যেনো তাঁর পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হাতে তোমাদের শাস্তি দেন। ব্যাস্, অপেক্ষা করো, আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকবো।’
9-53 : বলো : ‘তোমরা ইচ্ছায় ব্যয় (দান) করো কিংবা অনিচ্ছায়, তোমাদের থেকে তা কখনো কবুল করা হবেনা। কারণ তোমরা সত্যত্যাগী ফাসিক গোষ্ঠী।’
9-54 : তাদের অর্থ সাহায্য গ্রহণ করতে নিষেধ করার কারণ হলো, তারা কুফুরি করেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর রসূলের প্রতি এবং আলসেমি ছাড়া তারা সালাতে আসেনা, আর অনিচ্ছাকৃত ছাড়া দান করেনা।
9-55 : তাদের মাল - সম্পদ এবং সন্তান - সন্ততি যেনো তোমাকে তাজ্জব না করে। এগুলো দিয়ে আল্লাহ দুনিয়ার জীবনেই তাদের শাস্তি দিতে চান। তারা কাফির থাকা অবস্থায়ই তাদের আত্মা দেহত্যাগ করবে।
9-56 : তারা হলফ করে বলে, তারা তোমাদেরই লোক। আসলে তারা তোমাদের লোক নয়, বরং তারা ভীরু কাপুরুষ।
9-57 : তারা কোনো আশ্রয়স্থল, কিংবা গিরিগুহা অথবা প্রবেশস্থল পেলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে পালাবে।
9-58 : তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা সাদাকা বন্টনের ব্যাপারে তোমাকে দোষারোপ করে। অত:পর সেখান থেকে তাদের কিছু দিলে তুষ্ট হয়ে যায়, আর সেখান থেকে কিছু না দিলে সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ হয়ে যায়।
9-59 : ভালো হতো, আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূল তাদের যা দিয়েছেন তাতেই যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতো এবং বলতো: ‘আল্লাহই আমাদের জন্যে যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ আমাদের দেবেন তাঁর অনুগ্রহ থেকে এবং তাঁর রসূলও। আমরা আল্লাহর প্রতি অনুরাগী।’
9-60 : সাদাকা (যাকাত) পাবে ফকিররা (নিঃস্ব লোকেরা), মিসকিনরা (অভাবীরা), যাকাত সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা, যাদের মনজয় করা উদ্দেশ্য তারা, দাসমুক্তির জন্যে, ঋণ ভারাক্রান্ত - দেউলিয়ারা, আল্লাহর পথে এবং পথিকরা। এটা আল্লাহর দেয়া বিধান। আল্লাহ জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান।
9-61 : তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘তিনি তো কর্ণপাতকারী।’ হে নবী! বলো, ‘তার কান তোমাদের জন্য কল্যাণকর, তাই শুনে। সে তো আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করে। তোমাদের মধ্যে যারা মুমিন সে তাদের জন্যে রহমত।’ যারা আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
9-62 : তারা তোমাদের সন্তুষ্ট করার জন্যে তোমাদের কাছে আল্লাহর নাম নিয়ে হলফ করে। সন্তুষ্ট করার জন্যে তো আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই অধিক হকদার যদি তারা মুমিন হয়ে থাকে।
9-63 : তারা কি জানেনা যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের যারা বিরোধিতা করে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন। চিরকাল সেখানেই থাকবে তারা। এটা হবে এক মহা লাঞ্ছনা।
9-64 : মুনাফিকরা ভয় পায়, তাদের সম্পর্কে কোনো সূরা নাযিল না হয়, যাতে তাদের মনের খবর প্রকাশ করা হবে। হে নবী! বলো, বিদ্রুপ করতে থাকো। তোমরা যা ভয় পাচ্ছো, আল্লাহ তা প্রকাশ করেই ছাড়বেন।
9-65 : তুমি তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা অবশ্যি বলবে, ‘আমরা তো খেল তামাশা করছিলাম।’ বলো, ‘তোমরা কি আল্লাহর পথে, আল্লাহর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে বিদ্রুপ করছিলে?
9-66 : তোমরা ওযর পেশ করার চেষ্টা করোনা। তোমরা ঈমান আনার পর কুফুরি করেছো। তোমাদের মধ্যে একটি গ্রুপকে ক্ষমা করলেও অন্য গ্রুপকে শাস্তি দেবো, কারণ তারা অপরাধী।
9-67 : মুনাফিক পুরুষ আর মুনাফিক নারী তারা একজন আরেকজনের দোসর। তারা মন্দ কাজের আদেশ করে, ভালো কাজে নিষেধ করে এবং (দান করা থেকে) তাদের হাত গুটিয়ে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে তিনিও তাদের উপেক্ষা করে আছেন। নিশ্চয়ই মুনাফিকরা ফাসিক - পাপাচারী।
9-68 : আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী আর কাফিরদের ওয়াদা দিয়েছেন জাহান্নামের আগুনের, সেখানেই তারা থাকবে চিরকাল। সেটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট। আল্লাহ তাদের লানত দিয়েছেন এবং তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আযাব।
9-69 : (হে মুনাফিকরা!) তোমাদের অবস্থা তোমাদের আগেকার (মুনাফিকদের) মতোই। তবে তারা ছিলো তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী আর তাদের ধন - সম্পদ এবং সন্তান - সন্তুতিও ছিলো তোমাদের চাইতে বেশি। তাদের ভাগ্যে যা ছিলো তারা তা ভোগ করেছে। আর তোমাদের ভাগ্যে যা ছিলো তোমরাও তা ভোগ করলে যেমন - তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের ভাগ্যে যা ছিলো তা ভোগ করেছে। তারা যেমন বাহুল্য কথা - বার্তায় লিপ্ত থাকতো, তোমরাও সে রকম বাহুল্য কথা - বার্তায় লিপ্ত রয়েছো। এরাই সেইসব লোক, দুনিয়া ও আখিরাতে যাদের সমস্ত আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে। আর এরাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।
9-70 : এদের কাছে কি তাদের পূর্ববর্তী লোকদের খবর পৌঁছেনি? নূহ, আদ ও সামুদ জাতির, ইবরাহিমের কওম, মাদায়েনবাসী আর বিধ্বস্ত জাতির সংবাদ কি তাদের কাছে আসেনি? তাদের রসূলরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল। তাদের প্রতি যুলুম করা আল্লাহর নীতি নয়, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল।
9-71 : মুমিন পুরুষ আর মুমিন নারী পরস্পরের অলি (বন্ধু, অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক)। তারা ভালো কাজে আদেশ করে, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। এরাই সেইসব লোক, যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহ রহম করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী বিজ্ঞানময়।
9-72 : আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের ওয়াদা দিয়েছেন সেই জান্নাতের, যার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী - নহর। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। সেই চিরস্থায়ী জান্নাতে থাকবে মনোরম বাসস্থান। আর তাদের জন্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার থাকবে আল্লাহর রেজামন্দি। এটাই প্রকৃতপক্ষে মহাসাফল্য।
9-73 : হে নবী! জিহাদ করো কাফির এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে আর কঠোর হও তাদের প্রতি। তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম, আর সেটা খুবই নিকৃষ্ট ফিরে যাবার জায়গা।
9-74 : তারা আল্লাহর নামে হলফ করে বলে, তারা কিছু বলেনি। অথচ তারা কুফুরি কালাম উচ্চারণ করেছে এবং ইসলামে প্রবেশ করার পর কুফুরি করেছে। তারা এমন জিনিসের সংকল্প করেছিল যা তারা পায়নি। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে এবং তাঁর রসূল তাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন বলেই তারা বিরোধিতা করছে। এখন যদি তারা তওবা করে, এটাই হবে তাদের জন্যে উত্তম। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আল্লাহ তাদের আযাব দেবেন এক বেদনাদায়ক আযাব দুনিয়া ও আখিরাতে। আর পৃথিবীতে তাদের কোনো বন্ধুসাহায্যকারী থাকবে না।
9-75 : তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর কাছে এই অঙ্গীকার করেছিল: ‘আল্লাহ যদি তাঁর অনুগ্রহ থেকে আমাদের দান করেন, তবে অবশ্যি আমরা সাদাকা দেবো এবং সৎকর্মশীলদের অন্তরভুক্ত হয়ে যাবো।’
9-76 : অত:পর আল্লাহ যখন তাঁর অনুগ্রহ থেকে তাদের দান করলেন, তারা কৃপণতা প্রদর্শন করলো, বিরোধিতা করলো এবং মুখ ফিরিয়ে নিলো।
9-77 : ফলে তিনি তাদের অন্তরে মুনাফিকি স্থায়ী করে দিলেন তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাত হবার দিন পর্যন্ত। কারণ তারা আল্লাহকে দেয়া তাদের ওয়াদা খেলাফ করেছে এবং মিথ্যাচার করেছে।
9-78 : তারা কি জানেনা, আল্লাহ তাদের মনের গোপন কথা এবং গোপন পরামর্শ অবগত আছেন এবং অবশ্যি আল্লাহ গায়েব জান্তা?
9-79 : মুমিনদের মধ্যে যারা সন্তুষ্টচিত্তে সাদাকা (দান ও যাকাত) দেয়, আর যারা শ্রম খাটানো ছাড়া কিছুই পায়না, তাদেরকে যারা দোষারোপ ও বিদ্রুপ করে, তাদেরকেও আল্লাহ বিদ্রুপ করেন আর তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
9-80 : তুমি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কিংবা তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা না - ই করো, একই কথা। তুমি তাদের জন্যে সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহর এবং তাঁর রসূলের প্রতি কুফুরি করেছে। আল্লাহ ফাসিক - পাপাচারী লোকদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।
9-81 : যারা পেছনে রয়ে গেছে তারা আল্লাহর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে ঘরে বসে থাকার মধ্যেই আনন্দবোধ করে এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে অপছন্দ করে। তারা (তবুক যাত্রার প্রাক্কালে) বলেছিল : ‘গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়োনা।’ তাদের বলো, ‘জাহান্নামের আগুন এর চাইতেও অনেক বেশি গরম’, যদি তারা বুঝতো!
9-82 : সুতরাং তারা কিছুটা হেসে নিক, তারা তো প্রচুর কাঁদবে তাদের কৃতকর্মের কারণে।
9-83 : আল্লাহ যদি তোমাকে তাদের কোনো দলের কাছে ফেরত আনেন এবং তারা যদি তোমার কাছে বের হবার জন্যে অনুমতি প্রার্থনা করে, তুমি তাদের বলবে : ‘তোমরা আমার সাথে কখনো বের হবেনা এবং আমার সাথি হয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে কখনো যুদ্ধ করবে না। তোমরা তো প্রথমবার বসে থাকাকেই পছন্দ করেছিলে, সুতরাং বসে থাকো পেছনে পড়ে থাকাদের সাথে।’
9-84 : তাদের কেউ মরলে তুমি তার জন্যে (জানাযার) সালাত আদায় করবে না এবং তার কবরেও দাঁড়াবে না। তারা তো কুফুরি করেছে আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রসূলের প্রতি, আর তাদের মরণ হয়েছে ফাসিক - পাপিষ্ঠ অবস্থায়।
9-85 : তাদের ধন - মাল আর আওলাদ সংখ্যা যেনো তোমাকে মুগ্ধ না করে। আল্লাহ তো এর মাধ্যমে তাদেরকে দুনিয়ায় শাস্তি দিতে চান। তারা কাফির থাকা অবস্থায়ই তাদের আত্মা দেহ ত্যাগ করবে।
9-86 : যখন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার এবং তাঁর রসূলের সাথি হয়ে জিহাদ করার নির্দেশ নিয়ে কোনো সূরা নাযিল হয়, তখন তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যাদের শক্তি - সামর্থ আছে, তারা তোমার কাছে এসে (যুদ্ধে যাওয়া থেকে) অব্যাহতি চায়। তারা বলে, ‘আমাদের অব্যাহতি দিন, যারা (যুদ্ধে না গিয়ে) বসে থাকে আমরা তাদের সাথেই থাকবো।’
9-87 : তারা ঘরবাসিনীদের সাথে অবস্থান করাকেই পছন্দ করেছে এবং তাদের অন্তরে সীল মোহর মেরে দেয়া হয়েছে, ফলে তারা (সত্যকে) বুঝতে পারেনা।
9-88 : আর রসূল এবং তার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তারা নিজেদের মাল ও জান দিয়ে যুদ্ধ করেছে, তাদের জন্যেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ এবং তারাই হবে সফলকাম।
9-89 : আল্লাহ তাদের জন্যে প্রস্ত্তত রেখেছেন জান্নাত, যার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী - নহর, চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। এটাই মহাসাফল্য।
9-90 : বেদুঈনদের মধ্যে কিছু লোক এসেছিল যেনো তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়, আর যারা পেছনে বসেছিল তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। তাদের মধ্যে যারা কুফুরি করেছে, অচিরেই তাদের স্পর্শ করবে বেদনাদায়ক আযাব।
9-91 : যারা দুর্বল, যারা রোগাক্রান্ত এবং যারা অর্থ খরচে অসমর্থ (যুদ্ধে না গেলে) তাদের কোনো দোষ হবেনা যদি তারা হয়ে থাকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বস্ত ও আন্তরিক। যারা কল্যাণকামী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো কারণ নেই। আল্লাহ তো অতীব ক্ষমাশীল, দয়াময়।
9-92 : তাদেরও কোনো দোষ হবেনা, যারা যুদ্ধে যাবার জন্যে এসেছিল আর তুমি তাদের বলেছিলে, ‘তোমাদের জন্যে আমি কোনো বাহন পাচ্ছি না।’ তারা অর্থ ব্যয়ে অসামর্থের দু:খে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গিয়েছিল।
9-93 : যারা অভাবমুক্ত হওয়া সত্ত্বেও অব্যাহতি চেয়েছে, অবশ্যি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণ আছে। তারা ঘরবাসিনীদের সাথে ঘরে বসে থাকাকেই পছন্দ করেছে। আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মোহর মেরে দিয়েছেন, ফলে তারা কিছুই বুঝতে পারেনা।
9-94 : তোমরা যখন ফিরে আসবে, তখন এসে তারা তোমাদের কাছে ওজর (অজুহাত) পেশ করবে। তুমি বলবে, ‘অজুহাত পেশ করোনা, আমরা তোমাদের কখনো বিশ্বাস করবোনা, আল্লাহ্ তোমাদের খবর আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। তোমাদের কার্যকলাপ আল্লাহ্ দেখবেন এবং তাঁর রসূল। তারপর তোমাদের পাঠানো হবে তাঁর কাছে যিনি গায়েব ও দৃশ্য সবকিছু জানেন। তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে তিনিই তোমাদের অবহিত করবেন।
9-95 : তোমরা (যুদ্ধ থেকে মদিনায়) তাদের কাছে ফিরে এলে তারা আল্লাহর নামে হলফ করবে, যেনো তোমরা তাদের (যুদ্ধে না যাওয়ার) বিষয়টা উপেক্ষা করো। সুতরাং তোমরা তাদের উপেক্ষা করবে। কারণ, তারা অপবিত্র এবং তাদের (মন্দ) অর্জনের কারণে জাহান্নামই হবে তাদের আবাস।
9-96 : তারা তোমাদের কাছে হলফ করে, যাতে করে তোমরা তাদের প্রতি রাজি থাকো। তোমরা তাদের প্রতি রাজি হলেও আল্লাহ্ ফাসিক সম্প্রদায়ের প্রতি রাজি হবেন না।
9-97 : বেদুঈনরা কুফুরি এবং মুনাফিকিতে কঠোর। আল্লাহ্ তাঁর রসূলের প্রতি যা নাযিল করেছেন, তার সীমারেখা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার যোগ্যতা তাদের অনেক বেশি। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়।
9-98 : মরুবাসী বেদুঈনদের কেউ কেউ আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে অর্থদন্ড বলে মনে করে এবং তারা তোমাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের অপেক্ষা করে। দুর্ভাগ্য তাদেরই! আল্লাহ্ সব শুনেন, সব জানেন।
9-99 : মরুবাসী বেদুঈনদের কিছু লোক ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি এবং তারা যা ব্যয় করে, সেটাকে আল্লাহর নৈকট্য ও রসূলের দয়া লাভের উপায় মনে করে। আসলেই তা তাদের জন্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। অচিরেই আল্লাহ্ তাদের দাখিল করবেন তাঁর রহমতের মধ্যে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল দয়াময়।
9-100 : মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা (ঈমানের দাওয়াত গ্রহণে) প্রথম ও অগ্রগামী আর যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করছে, তাদের সবার প্রতি আল্লাহ্ রাজি হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি রাজি। তিনি তাদের জন্যে প্রস্ত্তত রেখেছেন জান্নাত, যার নিচে দিয়ে বহমান রয়েছে নদ - নদী - নহর। চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
9-101 : বেদুঈনদের যারা তোমাদের আশপাশে থাকে, তাদের মধ্যে মুনাফিক রয়েছে এবং মদিনাবাসীদের মধ্যেও রয়েছে। তারা মুনাফিকিতে পাকা। তুমি তাদের জানো না। আমরা তাদের জানি। আমরা তাদের দুইবার শাস্তি দেবো। তারপর তাদের ফেরত পাঠানো হবে বড় আযাবের (জাহান্নামের) দিকে।
9-102 : এছাড়াও কিছু লোক আছে যারা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তাদের আমল শংকর (মিশ্র), কিছু ভালো, কিছু মন্দ। আল্লাহ্ হয়তো তাদের ক্ষমা করবেন। কারণ, আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল দয়াময়।
9-103 : তাদের মাল - সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করো। এর ফলে তুমি তাদের পবিত্র পরিশুদ্ধ ও উন্নত করবে। তুমি তাদের দোয়া করো। তোমার দোয়া তাদের জন্যে হবে প্রশান্তির কারণ। আল্লাহ্ সব শুনেন, সব জানেন।
9-104 : তারা কি জানেনা, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের থেকে তওবা কবুল করেন এবং সাদাকা (দান) গ্রহণ করেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তওবা কবুলকারী পরম দয়াময়।
9-105 : বলো, তোমরা আমল করতে থাকো, আল্লাহ্ তোমাদের আমল দেখছেন আর তাঁর রসূল ও মুমিনরা। অচিরেই তোমাদের ফেরত দেয়া হবে গায়েব ও দৃশ্যের জ্ঞানী মহান আল্লাহর দিকে, তারপর তিনিই তোমাদের সংবাদ দেবেন তোমাদের কর্মকান্ড (কেমন ছিলো সে) সম্পর্কে।
9-106 : আর আল্লাহর নির্দেশ আসার অপেক্ষায় অপর কিছু লোকের বিষয়ে ফয়সালা স্থগিত রইলো। তিনি হয় তাদের শাস্তি দেবেন, নয়তো তাদের তওবা কবুল করবেন। আল্লাহ্ অতীব জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
9-107 : যারা একটি মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতিসাধন, কুফুরি ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতোপূর্বে যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে তার গোপন ঘাটি হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, তারা অবশ্যি হলফ করে বলবে, ‘আমরা সৎ উদ্দেশ্যেই এটা করেছি।’ আল্লাহ্ সাক্ষী, তারা মিথ্যাবাদী।
9-108 : তুমি কখনো ঐ মসজিদে দাঁড়াবে না। প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত স্থাপন করা হয়েছে তাকওয়ার উপর, সেটাই তোমার সালাতের জন্যে অধিক উপযুক্ত। তাতে এমন লোকেরা আছে যারা পবিত্রতা অর্জন পছন্দ করে আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অজর্নকারীদের পছন্দ করেন।
9-109 : যে ব্যক্তি তার ঘরের ভিত স্থাপন করে আল্লাহ্ ভীতি ও আল্লাহর রেজামন্দির উপর সে উত্তম, নাকি ঐ ব্যক্তি, যে তার ঘরের ভিত স্থাপন করে কোনো গর্তের ধ্বংসোন্মুখ কিনারে, ফলে তা সেটাকে নিয়েই পড়ে যায় জাহান্নামের আগুনে। আল্লাহ্ যালিম লোকদের সঠিক পথ দেখান না।
9-110 : তাদের নির্মিত ঘর তাদের অন্তরে সন্দেহের কারণ হয়ে থাকবে, যতোক্ষণ না তাদের অন্তর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ্ অতীব জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
9-111 : নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল কিনে নিয়েছেন, বিনিময়ে তারা লাভ করবে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে, মরবে এবং মারবে। তাওরাত, ইনজিল এবং কুরআনে এ সম্পর্কে হক ওয়াদা রয়েছে। প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চাইতে শ্রেষ্ঠ আর কে আছে? তোমরা যে সওদা করেছো তার জন্যে সুসংবাদ গ্রহণ করো। এটাই মহাসাফল্য।
9-112 : তারা হয়ে থাকে তওবাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকুকারী, সাজদাকারী, ভালো কাজের আদেশ দানকারী, মন্দ কাজে বাধাদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত হুদুদ (সীমারেখা) হিফাযতকারী। এসব (গুণের অধিকারী) মুমিনদের সুসংবাদ দাও।
9-113 : নিকটাত্মীয় হলেও মুশরিকদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্যে সঙ্গত নয়, যখন এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা নিশ্চিতই জাহান্নামি।
9-114 : ইবরাহিম যে তার পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল তার কারণ, সে তাকে এর জন্যে বিশেষভাবে ওয়াদা দিয়েছিল। কিন্তু যখন তার কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, সে আল্লাহর দুশমন, তখন সে তার (পিতার) সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে। ইবরাহিম তো অতিশয় কোমল হৃদয় এবং সহনশীল।
9-115 : আল্লাহর নিয়ম এটা নয় যে, তিনি কোনো জনগোষ্ঠীকে সঠিক পথ দেখানোর পর আবার বিপথগামী করে দেবেন, যতোক্ষণ না তাদের কাছে স্পষ্ট হয় যে, কী কী বিষয়ে তাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সব বিষয়ে জ্ঞানী।
9-116 : মহাকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর। তিনিই জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যু ঘটান। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্যে আর কোনো অলিও নেই, সাহায্যকারীও নেই।
9-117 : আল্লাহ্ অনুগ্রহের দৃষ্টি দিয়েছেন নবীর প্রতি, মুহাজিরদের প্রতি এবং আনসারদের প্রতি, যারা তার (নবীর) অনুসরণ করেছে কঠিন সংকটকালে, যদিও তাদের কিছু লোকের অন্তর বাঁকা হবার উপক্রম হয়েছিল। অত:পর আল্লাহ্ তাদের তওবা কবুল করেন। অবশ্যি আল্লাহ্ তাদের প্রতি অতীব কোমল, পরম দয়াময়।
9-118 : তিনি ঐ তিনজনকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের জন্যে প্রশস্ত পৃথিবীও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল এবং তাদের জীবনও তাদের জন্যে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল, আর তারা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, আল্লাহ্ ছাড়া তাদের কোনো আশ্রয়স্থল নেই। তখন তিনি তাদের তওবা কবুল করলেন, যাতে করে তারা ফিরে আসে তাঁর দিকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতিশয় তওবা কবুলকারী, পরম দয়াবান।
9-119 : হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদী - সত্যপন্থীদের সঙ্গী হয়ে যাও।
9-120 : মদিনাবাসী এবং আশেপাশের মরু বেদুঈনদের উচিত হয়নি, আল্লাহর রসূলের সহগামী না হয়ে পেছনে পড়ে থাকা এবং তার জীবন অপেক্ষা নিজেদের জীবনের প্রতি অধিক অনুরাগী হওয়া। কারণ, আল্লাহর পথে তাদের পিপাসা, ক্লান্তি, ক্ষুধা, কাফিরদের ক্রোধ জাগিয়ে তোলে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শত্রুদের পক্ষ থেকে কোনো আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া, এসবই তাদের আমলে সালেহ্ (নেক আমল)। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কল্যাণপরায়নদের কর্মফল বিনষ্ট করেন না।
9-121 : আর তারা কম ও বেশি যা - ই ব্যয় করে এবং যে কোনো প্রান্তরই অতিক্রম করে, তা তাদের জন্যে পুণ্য হিসাবে লেখা হয়, যাতে করে তারা যা করে আল্লাহ্ তাদেরকে তার চাইতে উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন।
9-122 : সব মুমিনদের একই সাথে অভিযানে বের হওয়া উচিত নয়। তাদের প্রত্যেক দল বা গোত্র থেকে একটি অংশ বের হয়না কেন, যেনো তারা দীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে এবং তাদের জাতিকে সতর্ক করে যখন তারা তাদের কাছে ফিরে যাবে, যাতে করে তারা সতর্ক হয়।
9-123 : হে ঈমানদার লোকেরা! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো এবং তারা যেনো তোমাদের মধ্যে দৃঢ়তা দেখতে পায়। জেনে রাখো, আল্লাহ্ মুত্তাকিদের সাথেই আছেন।
9-124 : যখন কোনো সূরা নাযিল হয়, তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে : ‘এটি তোমাদের কার ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছে?’ যারা মুমিন এটি কেবল তাদেরই ঈমান বাড়িয়ে দেয় এবং তারাই আনন্দিত হয়।
9-125 : আর যাদের অন্তরে রোগ আছে তাদের কলুষতার সাথে আরো কলুষতা যোগ করে এবং তাদের মরণ হয় কাফির অবস্থায়।
9-126 : তারা কি দেখেনা, তারা হরেক বছর একবার বা দুইবার ফিতনাগ্রস্ত হয়? তারপরও তারা তওবা করেনা এবং উপদেশ গ্রহণ করেনা।
9-127 : যখনই কোনো সূরা নাযিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং ইশারায় জানতে চায় ‘কেউ তোমাদের দেখছে কি?’ অত:পর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ্ তাদের অন্তরকে সত্য থেকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন, কারণ তাদের কোনো বুঝ জ্ঞান নেই।
9-128 : তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকেই এসেছে একজন রসূল। তোমাদের যা কিছু বিপর্যস্ত করে তা তার জন্যে কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অতীব দয়ালু, পরম করুণাময়।
9-129 : তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তুমি বলো: ‘আল্লাহ্ই আমার জন্যে যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই, তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করলাম, তিনিই মহান আরশের প্রভু।’