আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 11, হুদ - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 11, হুদ



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১২৩, রুকু সংখ্যা: ১০

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৪মানবজাতিকে এক আল্লাহর ইবাদত, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাঁর দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দিতে রসূলের প্রতি নির্দেশ।
০৫-১১আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, সকল জীবের রিযিকদাতা, মহাবিশ্বের স্রষ্টা। পরকালের প্রতি মানুষের অস্বীকৃতি। কারা ক্ষমা লাভ করবে?
১২-২৪কুরআনের প্রতি সন্দেহপোষণকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ। দুনিয়া পূজারিদের জন্য আখিরাতে কোনো অংশ নেই। আল্লাহর পথে বাধাদানকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত। যারা ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে তারাই সফল।
২৫-৪৯নূহ আ.-এর জাতির প্রতি তাঁর দাওয়াত ও উপদেশ, তাঁর জাতির হঠকারিতা এবং তাদের ধ্বংস ও মুমিনদের মুক্তির ইতিহাস।
৫০-৬০আদ জাতির কাছে হুদ আ.-এর দাওয়াত ও উপদেশ। আল্লাহর দিকে আসতে তাদের অস্বীকৃতি এবং তাদের ধ্বংসের ইতিহাস।
৬১-৬৮সামুদ জাতির কাছে সালেহ্ আ.-এর দাওয়াত এবং তাদের অবাধ্যতা ও ধ্বংসের ইতিহাস।
৬৯-৭৬ইবরাহিম আ.-এর কাছে ফেরেশতাদের আগমন এবং তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রীকে পুত্র সন্তানের সুসংবাদ।
৭৭-৮৩লুত জাতির অপকর্ম, তাঁর জাতিকে ধ্বংসের জন্য ফেরেশতাদের আগমন এবং তাদের ধ্বংসের ইতিহাস।
৮৪-৯৫মাদিয়ানবাসীকে শুয়াইব আ. কর্তৃক সংশোধন প্রচেষ্টার ইতিহাস। তাদের অবাধ্যতা ও ধ্বংসের বিবরণ।
৯৬-৯৯ফিরাউন ও তার জাতির কাছে মূসা আ. এর দাওয়াত এবং তাদের অবাধ্যতার বিবরণ।
১০০-১২৩নবীর অবাধ্য হওয়ার ব্যাপারে মানবজাতির প্রতি সতর্কবাণী। নবীর দাওয়াত গ্রহণের মাধ্যমে মানবজাতির ভাগ্যবান ও দুর্ভাগা এই দুভাগে বিভক্তি। বিরুদ্ধবাদীদের মোকাবেলায় নবীর প্রতি অনুসরণীয় নির্দেশাবলি।
11-1 : আলিফ লাম রা। এটি একটি কিতাব এর আয়াতসমূহ বিজ্ঞানময় সুবিন্যস্ত, বিশদভাবে বর্ণিত, মহাবিজ্ঞানী সর্বজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।
11-2 : (হে নবী! জানিয়ে দাও,) তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো ইবাদত (আনুগত্য, দাসত্ব, পূজা, উপাসনা, প্রার্থনা) করোনা। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
11-3 : তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তাঁর দিকে ফিরে আসো, তাহলে তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের উত্তম জীবন সামগ্রী উপভোগ করার সুযোগ দেবেন এবং প্রত্যেক মর্যাদাবানকে দেবেন তার প্রাপ্য মর্যাদা। কিন্তু তোমরা যদি (একথা না মেনে) মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি তোমাদের জন্যে আশংকা করছি এক গুরুতর দিনের আযাবের।
11-4 : আল্লাহর কাছেই হবে তোমাদের প্রত্যাবর্তন এবং তিনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
11-5 : সাবধান! তারা তাঁর কাছ থেকে নিজেদের গোপন করার জন্যে তাদের বক্ষ দ্বিভাজ করে। সাবধান! তারা যখন তাদেরকে বস্ত্র দিয়ে ঢেকে নেয়, তখন তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে তিনি তা জানেন। অবশ্যি তিনি অন্তরের খবর বিশেষভাবে অবহিত।
11-6 : পৃথিবীতে বিচরণকারী সব জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে তিনি অবহিত। সবই একটি স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
11-7 : তিনিই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয়টি কালে এবং তাঁর আরশ ছিলো পানির উপর তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে কে উত্তম তা পরীক্ষার উদ্দেশ্যে। তুমি যদি তাদের বলো: ‘তোমরা অবশ্যি মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হবে,’ তখন কাফিররা অবশ্যি বলবে: ‘এতো এক সুস্পষ্ট ম্যাজিক।’
11-8 : আমরা যদি একটা নির্দিষ্ট সময়কাল তাদের উপর আযাব স্থগিত রাখি, তখন তারা অবশ্যি বলবে: ‘কী কারণে আসছে না সে জিনিসটি?’ সাবধান! যেদিন সেটি তাদের কাছে আসবে, তা আর ফেরত নেয়া হবেনা এবং তারা যে বিষয়টাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করছে তা তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলবে।
11-9 : আমরা যদি মানুষকে আমাদের রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই এবং পরে তা তাদের থেকে উঠিয়ে নেই, তখন তারা হতাশ এবং অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।
11-10 : আর দুঃখ - দুর্দশা স্পর্শ করার পর আমরা যদি তাদের সুখ - সম্পদের স্বাদ আস্বাদন করাই, তখন অবশ্যি তারা বলবে: ‘আমার দুঃখ - দুর্দশা কেটে গেছে।’ তখন সে উল্লসিত ও অহংকারী হয়ে পড়ে।
11-11 : তবে যারা সবর অবলম্বন করে এবং আমলে সালেহ্ করে তাদের জন্যে রয়েছে মাগফিরাত এবং বিশাল পুরস্কার।
11-12 : লোকেরা যে বলে: ‘তার সাথে কোনো ধনভান্ডার নাযিল হলো না কেন? কিংবা তার সাথে ফেরেশতা এলোনা কেন?’ এ কারণে কি তুমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ অহির কিছু অংশ বর্জন করবে? এবং এর ফলে কি তোমার মন ছোট হয়ে যাবে? জেনে রাখো, তুমি তো কেবলমাত্র একজন সতর্ককারী। আল্লাহ সব বিষয়ে উকিল - দায়িত্বশীল।
11-13 : নাকি তারা বলে: ‘সে নিজেই এটা (কুরআন) রচনা করে নিয়েছে।’ তুমি বলো: ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো তবে এটির অনুরূপ দশটি সূরা নিজেরা রচনা করে আনো এবং আল্লাহ্ ছাড়া আর যাদেরকে পারো (সহযোগিতা নেয়ার জন্যে) ডেকে আনো।’
11-14 : তারা যদি তোমার এ আহবানে এগিয়ে না আসে, তবে জেনে রাখো, এটি (এই কুরআন) তো আল্লাহর এলেমের ভিত্তিতে নাযিল করা হয়েছে, আর তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা কি মুসলিম (মান্যকারী) হবে?
11-15 : যারা দুনিয়ার জীবন এবং তার শোভা সৌন্দর্য কামনা করে, আমরা দুনিয়াতেই তাদের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দিয়ে থাকি এবং সেখানে তাদের কোনো প্রকার কম দেয়া হয়না।
11-16 : আর আখিরাতে তাদের জন্যে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই থাকেনা। তারা এখানে যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তাদের সব কাজই অর্থহীন।
11-17 : তারা কি ঐ লোকদের সমতুল্য হতে পারে, যারা তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এক সুস্পষ্ট প্রমাণের (কুরআনের) উপর প্রতিষ্ঠিত, যা তিলাওয়াত করে তাঁর প্রেরিত সাক্ষী (জিবরিল) এবং যার আগে এসেছিল মূসার উপর অবতীর্ণ কিতাব পথ প্রদর্শক ও রহমত হিসাবে? তারা এর প্রতি ঈমান রাখে। মানব দলসমূহের যারাই এটিকে অস্বীকার করে আগুনই হবে তাদের প্রতিশ্রুত স্থান। সুতরাং তুমি এটির সম্পর্কে কোনো প্রকার সন্দেহে থেকোনা। এটি তো তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে এক মহাসত্য। তবে অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করেনা।
11-18 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যে মিথ্যা রচনা করে আল্লাহর প্রতি আরোপ করে। তাদের উপস্থাপন করা হবে তাদের প্রভুর দরবারে এবং সাক্ষীরা বলবে: এরাই তাদের প্রভুর প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। সাবধান, যালিমদের প্রতি আল্লাহর লানত,
11-19 : যারা বাধা সৃষ্টি করে আল্লাহর পথে এবং তাতে সন্ধান করে বক্রতা এবং যারা আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাসী।
11-20 : এরা পৃথিবীতে আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না। আর প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ ছাড়া তো আর তাদের কোনো অলি ছিলনা। তাদের আযাব দ্বিগুণ করা হবে। তাদের শোনারও সামর্থ ছিলনা এবং তারা দেখতেও পেতোনা।
11-21 : তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তাদের কল্পিত (শরিকরা) তখন তাদের থেকে উধাও হয়ে যাবে।
11-22 : কোনো সন্দেহ নেই, আখিরাতে তারা হবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।
11-23 : যারা ঈমান আনে, এবং আমলে সালেহ্ করে এবং তাদের প্রভুর প্রতি বিনীত হয়ে জীবন যাপন করে, তারাই হবে জান্নাতের অধিকারী, সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল।
11-24 : এই দুই পক্ষের উপমা হলো এ রকম, যেমন একজন হলো অন্ধ ও বধির এবং অপরজন হলো চক্ষুষ্মানশ্রবণশক্তি সম্পন্ন। এরা দুইজন কি সমতুল্য? কেন তোমরা বুঝার চেষ্টা করোনা?
11-25 : আমরা নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার কওমের কাছে। (সে তাদের বলেছিল), আমি তোমাদের প্রতি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী।
11-26 : তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো ইবাদত করোনা। আমি তোমাদের জন্যে এক বেদনাদায়ক দিনের আযাবের আশংকা করছি।
11-27 : তখন তার কওমের প্রধানরা বলেছিল: ‘আমরা তো তোমাকে আমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই দেখছিনা। আর আমরা বাহ্য দৃষ্টিতেই দেখছি, যারা তোমার অনুসরণ করছে তারা আমাদের মধ্যে একেবারেই নীচু শ্রেণীর। আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্বই দেখছি না। বরং আমরা তো মনে করি তোমরা সবাই মিথ্যাবাদী।’
11-28 : সে বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা ভেবে দেখো, আমি যদি আমার প্রভুর প্রেরিত সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি তাঁর নিজ অনুগ্রহ থেকে আমাকে দান করে থাকেন আর সে বিষয়ে যদি তোমাদের অন্ধ করে দেয়া হয়ে থাকে, তবে তোমাদের অপছন্দ সত্ত্বেও কি আমি তোমাদের তা গ্রহণে বাধ্য করতে পারি?
11-29 : হে আমার কওম! এ কাজের জন্যে তো আমি তোমাদের কাছে মাল - সম্পদ চাইনা। আমার প্রতিদানের দায়িত্ব তো আল্লাহর। আমি তো মুমিনদেরকে আমার কাছ থেকে তাড়িয়ে দিতে পারিনা। তারা অবশ্যি তাদের প্রভুর সাক্ষাত লাভ করবে। বরং আমি তো দেখছি তোমরাই সবাই জাহিল লোক।
11-30 : হে আমার কওম! আমি যদি তাদের তাড়িয়ে দেই তবে আল্লাহর পাকড়াও থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? তোমরা কি অনুধাবন করার চেষ্টা করবেনা?
11-31 : আমি তো তোমাদের বলছিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর অর্থভান্ডার রয়েছে, কিংবা আমি গায়েব জানি। কিংবা আমি তো এ কথাও বলছিনা যে, আমি একজন ফেরেশতা। তোমাদের দৃষ্টিতে যারা নিম্নশ্রেণীর তাদের ব্যাপারেও আমি একথা বলিনা যে, আল্লাহ্ কখনো তাদের কল্যাণ করবেন না। তাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ্ই তা অধিক জানেন। তোমাদের কথা মেনে নিলে তো আমি যালিমদের মধ্যে গণ্য হয়ে যাবো।’’
11-32 : তারা বলেছিল: ‘হে নূহ! তুমি তো আমাদের সাথে বিতন্ডা করেছো প্রচুর বিতন্ডা, সুতরাং তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে আমাদেরকে তোমার প্রতিশ্রুত ঘটনাটি ঘটিয়ে দেখাও।’
11-33 : জবাবে সে বলেছিল: ‘সেই ঘটনাটা একমাত্র আল্লাহ্ই ঘটিয়ে তোমাদের দেখাতে পারেন যদি তিনি চান এবং তোমরা তা প্রতিহত করতে পারবে না।’
11-34 : আল্লাহ্ই যদি তোমাদের বিভ্রান্ত করতে চান তবে আমি নসিহত করতে চাইলেও আমার নসিহত তোমাদের কোনো উপকারে আসবে না। তিনিই তোমাদের প্রভু। তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে।
11-35 : নাকি তারা বলে: ‘সে নিজেই এটি রচনা করে নিয়েছে।’ তুমি বলো: ‘এটি (এ কুরআন) যদি আমি রচনা করে থাকি, তবে আমার অপরাধের জন্যে আমিই দায়ী হবো। আর তোমরা যে অপরাধ করছো তার দায় দায়িত্ব থেকে আমি মুক্ত।’
11-36 : নূহকে অহির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, তোমার কওমের যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া আর কেউই ঈমান আনবে না। সুতরাং তাদের কর্মকান্ডের কারণে তুমি আর নিরাশ হয়োনা।
11-37 : আমাদের তত্ত্বাবধান ও অহির ভিত্তিতে তুমি একটি নৌযান তৈরি করো এবং যারা যুলুম করেছে তাদের বিষয়ে তুমি আমার কাছে কোনো প্রকার সুপারিশ করোনা, তারা পানিতে নিমজ্জিত হবেই।
11-38 : সে নৌযান তৈরি করছিল, তখন তার কওমের প্রধানরা তার ওখান দিয়ে যাওয়া আসার সময় এ নিয়ে তাকে উপহাস করতো। সে বলেছিল: তোমরা যদি আমাদের নিয়ে উপহাস করো, আমরাও তোমাদের নিয়ে উপহাস করবো যেভাবে তোমরা আমাদের নিয়ে উপহাস করছো।
11-39 : অচিরেই তোমরা জানতে পারবে, কাদের উপর এসে পড়বে অপমানকর আযাব এবং কাদের উপর হালাল হয়ে যাবে স্থায়ী আযাব।
11-40 : অবশেষে এসে পড়ে আমাদের নির্দেশ এবং চুলা থেকে উথলে উঠতে থাকে পানির স্রোত। আমরা বললাম, তাতে উঠিয়ে নাও সব শ্রেণীর যুগলের দুইটি করে আর তোমার পরিবার পরিজনকে আর যারা ঈমান এনেছে, তবে তাদেরকে নয় যাদের ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আর তার (নূহের) সাথে ঈমান এনেছিল মাত্র কয়েকজনই।
11-41 : সে বলেছিল: ‘তোমরা এতে আরোহণ করো। আল্লাহর নামে (আরম্ভ করছি) এর চলতি এবং এর স্থিতি। আমার প্রভু অবশ্যি পরম ক্ষমাশীল দয়াময়।’
11-42 : নৌযানটি তাদের নিয়ে চলছিল তরঙ্গের মধ্যে পর্বতের মতো। আর নূহ তার ছেলেকে ডেকে বলেছিল, যে (নৌযানে আরোহন না করে) পৃথক ছিলো: ‘হে আমার পুত্র! আমাদের সাথে আরোহণ করো, কাফিরদের সাথি হয়ে থেকে যেয়োনা।’
11-43 : কিন্তু সে বলেছিল: ‘আমি (উঁচু) পর্বতে আশ্রয় নিচ্ছি, যা আমাকে পানি (প্লাবন) থেকে রক্ষা করবে।’ সে (নূহ) বললো: ‘আজ আল্লাহর ফায়সালা থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, তবে তিনি যাকে দয়া করেন সে ছাড়া। (বলতে বলতে) তরঙ্গ তাদের মাঝখানে ঢুকে গেলো এবং সে ডুবে যাওয়াদের অন্তরভুক্ত হয়ে গেলো।
11-44 : অবশেষে বলা হলো: ‘হে পৃথিবী, তুমি তোমার পানি গ্রাস করে নাও! হে আকাশ, তুমি বর্ষণ বন্ধ করো।’ অত:পর প্লাবন শেষ হলো এবং ফায়সালা পূর্ণ হলো এবং নৌযানটি জুদি পাহাড়ের উপর এসে স্থির হলো। আর বলা হলো: ‘নিপাত গেলো যালিম সম্প্রদায়।’
11-45 : নূহ তার প্রভুকে ডেকে বলেছিল: ‘আমার প্রভু! আমার ছেলে তো আমার পরিবারেরই একজন আর তোমার ওয়াদা তো সত্য এবং তুমিই তো সব বিচারকের বড় ন্যায় বিচারক।’
11-46 : তিনি বলেছিলেন: ‘হে নূহ! সে তোমার পরিবারের সদস্য নয়। সে তো এক অসৎকর্ম। ফলে এমন বিষয়ে আমার কাছে প্রার্থনা করোনা, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি তুমি যেনো জাহিলদের মতো কথা না বলো।’
11-47 : তখন সে বললো: ‘আমার প্রভু! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে যেনো তোমার কাছে প্রার্থনা না করি সে জন্যে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না করো এবং আমার প্রতি রহম না করো, তবে তো আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তরভুক্ত হয়ে পড়বো।’
11-48 : বলা হয়েছিল: ‘হে নূহ! (নৌযান থেকে) নেমে পড়ো। আমাদের পক্ষ থেকে সালাম ও বরকত তোমার প্রতি এবং যেসব প্রজাতি তোমার সাথে রয়েছে তাদের প্রতি। আর অন্যান্য জাতিসমূহকে আমরা কিছুকাল জীবন উপভোগ করতে দেবো, তারপর আমাদের পক্ষ থেকে বেদনাদায়ক আযাব তাদেরকেও স্পর্শ করবে।’
11-49 : এগুলো গায়েবের সংবাদ তোমার প্রতি আমরা অহি করছি। তুমি কিংবা তোমার কওম ইতোপূর্বে এ বিষয়গুলো জানতে না। অতএব সবর অবলম্বন করো, পরিণামে সাফল্য মুত্তাকিদেরই জন্যে।
11-50 : আর আমরা আদ জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদেরই ভাই হুদকে। সে তাদের বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ্ নেই। তবে তোমরা তো কেবল মিথ্যা রচনাকারী।
11-51 : হে আমার কওম! আমি তো এ কাজের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো প্রকার পারিশ্রমিক চাইনা। আমার প্রতিদানের দায়িত্ব তাঁর, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তবু কি তোমরা বুঝার চেষ্টা করবেনা?
11-52 : হে আমার কওম! তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমাদের প্রভুর কাছে, অত:পর ফিরে আসো তাঁর দিকে। তিনি তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করবেন এবং বর্তমান শক্তির সাথে আরো শক্তি বাড়িয়ে দেবেন। তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়োনা।’’
11-53 : তারা বলেছিল: ‘‘হে হুদ! তুমি তো আমাদের কাছে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসোনি। আমরা তো তোমার কথায় আমাদের ইলাহদের (দেব দেবীদের) পরিত্যাগ করতে পারিনা। তাছাড়া আমরা তোমার প্রতি বিশ্বাসীও নই।
11-54 : আমরা বলছি, তোমাদের উপর আমাদের দেব - দেবীদের অভিশাপ পড়েছে।’’ সে বলেছিল: ‘‘আমি আল্লাহকে সাক্ষী বানাচ্ছি এবং তোমরাও সাক্ষী থাকো, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরিক করছো আমি তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছি।
11-55 : আল্লাহ্ ছাড়া তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো, তারপর আমাকে কোনো অবকাশ দিও না।
11-56 : আমি তো তাওয়াক্কুল করেছি আল্লাহর উপর যিনি আমার প্রভু এবং তোমাদেরও প্রভু। এমন কোনো জীব নেই, যে তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই। নিশ্চয়ই আমার প্রভু সঠিক সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত।
11-57 : আর তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রাখো, আমি তোমাদের কাছে যে বার্তা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমার প্রভু তোমাদের পরিবর্তে ভিন্ন কোনো কওমকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। আমার প্রভু সব কিছুর রক্ষক।’’
11-58 : তারপর যখন আমাদের নির্দেশ এসে পৌঁছে, আমরা হুদকে এবং তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমাদের দয়ায় নাজাত দিয়েছিলাম এবং তাদের রক্ষা করেছিলাম কঠিন আযাব থেকে।
11-59 : তারা ছিলো আদ জাতি, তারা তাদের প্রভুর আয়াত অস্বীকার করেছিল এবং তাঁর রসূলদের অমান্য করেছিল এবং প্রত্যেক অহংকারী স্বৈরাচারীর অনুসরণ করেছিল।
11-60 : দুনিয়ার জীবনে তাদের অভিশাপগ্রস্ত করা হয়েছিল এবং কিয়ামতের দিনও হবে তারা অভিশাপগ্রস্ত। সাবধান, আদ জাতি তাদের প্রভুকে অস্বীকার করেছিল। সাবধান, নিপাত গিয়েছিল আদ জাতি, যারা ছিলো হুদের কওম।
11-61 : আর আমরা সামুদ জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদেরই ভাই সালেহকে। সে তাদের বলেছিল: ‘হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ্ নেই। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন জমিন থেকে এবং তাতেই তোমাদের তামির (প্রতিষ্ঠিত) করেছেন। অতএব, তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তাঁরই দিকে ফিরো আসো। অবশ্যি আমার প্রভু অতি কাছে এবং ডাকে সাড়া দানকারী।’
11-62 : তারা বলেছিল: ‘হে সালেহ্! ইতোপূর্বে তুমি ছিলে আমাদের আশা - ভরসার স্থল। আর এখন কি তুমি আমাদের পূর্বপুরুষরা যাদের ইবাদত করতো তাদের ইবাদত করতে আমাদের নিষেধ করছো? তুমি আমাদের যেদিকে ডাকছো সে বিষয়ে অবশ্যি আমরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে রয়েছি।
11-63 : সে বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমাদের মতামত কী, আমি যদি আমার প্রভুর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি তাঁর পক্ষ থেকে আমাকে কোনো অনুগ্রহ দান করেন, তখন আমাকে কে রক্ষা করবে যদি আমি তাঁর অবাধ্য হই? তোমরা আমার ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বাড়াতে পারবে না।
11-64 : হে আমার কওম! এটি আল্লাহর উটনী তোমাদের জন্যে একটি নিদর্শন। তোমরা এটিকে আল্লাহর জমিনে চরে খেতে দাও। তোমরা এটিকে মন্দ (উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করোনা, করলে তোমাদের উপর আপতিত হবে আশু আযাব।
11-65 : কিন্তু তারা সেটিকে হত্যা করে। তখন সে তাদের বলেছিল: ‘তোমরা তোমাদের ঘরে মাত্র তিনদিন উপভোগ করো। এটি একটি অনিবার্য সত্য ওয়াদা।’
11-66 : অত:পর যখন আমাদের নির্দেশ এসে পৌঁছালো আমরা আমাদের অনুগ্রহে সালেহ্ এবং তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদের রক্ষা করলাম সেদিনের চরম লাঞ্ছনা থেকে। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু মহাশক্তিধর পরাক্রমশালী।
11-67 : আর যারা যুলুম করেছিল তাদের পাকড়াও করলো এক বিকট শব্দ। ফলে তারা তাদের ঘরে ঘরে উপুড় হয়ে পড়েছিল।
11-68 : অবস্থা এমন হয়েছিল যেনো তারা কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। সাবধান, সামুদ জাতি তাদের প্রভুকে অস্বীকার করেছিল। সাবধান, সামুদ জাতি সমূলে নিপাত হয়ে গিয়েছিল।
11-69 : আমাদের দূত (ফেরেশতারা) সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল ইবরাহিমের কাছে। এসে তারা বলেছিল: ‘সালাম!’ সেও বলেছিল: ‘সালাম।’ অত:পর সে দেরি না করে ভুনা করা গো - বাছুর নিয়ে এলো (তাদের মেহমানদারির জন্যে)।
11-70 : সে যখন দেখলো, তারা সে (খাবারের) দিকে হাত বাড়াচ্ছে না, তখন সে তাদের আগমনকে অশুভ মনে করলো এবং তাদের ব্যাপারে তার মনে ভয় ঢুকলো। তারা বললো: ‘আপনি ভয় পাবেননা, আমরা তো লুতের কওমের কাছে প্রেরিত হয়েছি।’
11-71 : তার স্ত্রী দাঁড়ানো ছিলো, সে (তার স্ত্রী) হেসে ফেললো। তখন আমরা তাকে সুসংবাদ দিলাম (পুত্র) ইসহাকের এবং ইসহাকের পরে (নাতি) ইয়াকুবের।
11-72 : সে (ইবরাহিমের স্ত্রী সারাহ্) বললো: ‘হায় হায়, আমি সন্তানের মা হবো, অথচ আমি একজন বৃদ্ধা এবং আমার স্বামীও বৃদ্ধ, এ - তো এক বিস্ময়কর ব্যাপার!’
11-73 : তারা বললো: ‘আপনি কি আল্লাহর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিস্ময়বোধ করছেন? হে আহলে বাইত (হে ঘরবাসী)! এটা তো আপনাদের প্রতি আল্লাহর রহমত এবং বরকত। নিশ্চয়ই তিনি সপ্রশংসিত ও সম্মানিত।’
11-74 : ইবরাহিমের থেকে যখন আতংক দূর হয়ে গেলো এবং সে সুসংবাদ লাভ করলো, তখন সে লুতের কওমের ব্যাপারে বিতর্ক করতে থাকলো।
11-75 : নিশ্চয়ই ইবরাহিম ছিলো এক সহনশীল, কোমল হৃদয় এবং আল্লাহমুখী মানুষ।
11-76 : হে ইবরাহিম! এ (বিতর্ক) থেকে বিরত হও, (তাদের প্রতি তো) তোমার প্রভুর নির্দেশ এসে গেছে। তাদের উপর এক অপ্রতিরোধ্য আযাব এসে যাচ্ছে।
11-77 : অত:পর আমাদের দূত (ফেরেশতারা) যখন লুতের কাছে এলো, তাদের আগমনে সে বিষন্ন হয়ে পড়লো এবং তাদের (তার জাতিকে) রক্ষায় নিজেকে অক্ষম মনে করলো, আর বললো: ‘এ তো এক শোকাবহ দিন।’
11-78 : তখন তার কওম তার দিকে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে এলো এবং আগে থেকে তারা কুকাজে অভ্যস্ত ছিলো। সে বললো: ‘হে আমার কওম! এই যে আমার (কওমের) কন্যারা রয়েছে, তোমাদের জন্যে এরাই পবিত্র (তোমরা তাদের বিয়ে করে নাও)। আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে অপমানিত করোনা। তোমাদের মধ্যে কি একজন ভালো মানুষও নেই?’
11-79 : তারা বললো: ‘তুমি তো জানো, তোমার কন্যাদের আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা কী চাই তুমি তো তা ভালো করেই জানো।’
11-80 : সে বললো: ‘তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকতো অথবা আমি যদি আশ্রয় পেতাম কোনো সুদৃঢ় স্তম্ভের!’
11-81 : তারা বললো: হে লুত! আমরা তো আপনার প্রভুর দূত। ওরা কখনো তোমার কাছে পৌঁছাতে পারবে না। আপনি রাতের কোনো এক সময় আপনার পরিবার পরিজন নিয়ে বের হয়ে পড়ুন এবং আপনাদের কেউই যেনো পেছনে না তাকায়। তবে আপনার স্ত্রীকে সাথে নেবেন না। তাদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। প্রভাতই তাদের নির্ধারিত সময়। প্রভাত কি ঘনিয়ে আসেনি?
11-82 : তারপর যখন আমাদের নির্দেশ এসে পৌছে, তখন আমরা সেই জনপদকে উল্টে দিয়েছি এবং তার উপর অনবরত বর্ষণ করেছি পাথর কঙ্কর।
11-83 : তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে সেগুলো ছিলো (তাদের) নাম লেখা কঙ্কর। সেই জনপদ (তোমার প্রতিপক্ষ) এই যালিমদের থেকে দূরে নয়।
11-84 : আর আমরা মাদায়ানে পাঠিয়েছিলাম তাদেরই ভাই শুয়াইবকে। সে তাদের বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ্ নেই। তোমরা মাপে এবং ওজনে কম করোনা। আমি তো তোমাদের স্বচ্ছল দেখছি। আমি তোমাদের উপর আশংকা করছি এক সর্বগ্রাসী দিনের আযাবের।
11-85 : হে আমার কওম! ইনসাফের সাথে পূর্ণ করে দাও মাপ এবং ওজন। মানুষকে তাদের প্রাপ্য সামগ্রী কম দিও না এবং দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িয়োনা।
11-86 : আল্লাহর অনুমোদিত বাকিটাই (লাভটাই) তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তুমি মুমিন হও। আমি তোমাদের উপর পাহারাদার নই।’’
11-87 : তখন তারা বলেছিল: ‘হে শুয়াইব! তোমার সালাত কি তোমাকে এই নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা যে সবের ইবাদত করতো আমরা যেনো সেগুলোকে ত্যাগ করি? কিংবা আমাদের ধন - সম্পদ নিয়ে আমরা যা ইচ্ছে তাই করি? শুধু তুমি রয়ে গেলে একজন উঁচু মনের ধৈর্যশীল সৎ মানুষ।’
11-88 : তখন সে বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা কি ভেবে দেখেছো, আমি যদি আমার প্রভুর পক্ষ থেকে এক সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি তাঁর পক্ষ থেকে আমাকে উত্তম জীবিকা দান করেন (তবে আমি কী করে তাঁর অবাধ্য হই?)। আমি চাইনা, তোমাদেরকে আমি যা নিষেধ করছি, আমি নিজেই তার বিপরীত আচরণ করি। আমি তো আমার সাধ্যমতো সংশোধন করতে চাই। আমি তো ততোটাই করি যতোটা আল্লাহ্ আমাকে তৌফিক দেন। তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী।
11-89 : হে আমার কওম! আমার বিরুদ্ধাচরণ যেনো তোমাদেরকে এমন অপরাধে লিপ্ত না করে, যার ফলে তোমাদের উপর সে রকম বিপদ এসে পড়ে, যে রকম আপদ আপতিত হয়েছিল নূহের কওম, হুদের কওম, কিংবা সালেহর কওমের উপর। আর লুতের কওমের ঘটনা তো তোমাদের থেকে বেশি দূরের নয়।
11-90 : তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তারপর তাঁরই দিকে ফিরে আসো। নিশ্চয়ই আমার প্রভু পরম দয়াবান, বন্ধুসুলভ।’’
11-91 : তখন তারা বলেছিল: ‘হে শুয়াইব! তুমি যা বলছো তার অনেক কথাই আমরা বুঝতে পারছিনা। আমাদের মাঝে তো আমরা তোমাকে দুর্বল দেখতে পাচ্ছি। আমাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলে আমরা তোমাকে পাথর মেরে হত্যাই করতাম আর আমাদের উপর তুমি শক্তিমান নও।’
11-92 : সে বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমাদের সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্কটা কি আল্লাহর চাইতেও তোমাদের উপর বেশি শক্তিশালী? অথচ তোমরা তাঁকেই সম্পূর্ণ পেছনে ফেলে রেখেছো। জেনে রাখো, তোমরা যা করছো আমার প্রভু তা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।’
11-93 : হে আমার কওম! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিজেদের কর্মকান্ড করতে থাকো, আমিও আমার কাজ করে যাবো। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে, কার উপর এসে পড়ে অপমানকর আযাব এবং কে মিথ্যাবাদী? তোমরা অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।’’
11-94 : অত:পর যখন আমাদের নির্দেশ এসে পড়েছিল, আমরা আমাদের রহমতে নাজাত দিয়েছিলাম শুয়াইবকে এবং যারা তার সাথে ঈমান এনেছিল তাদেরকে। আর মহা বিকট শব্দ পাকড়াও করে নিয়েছিল যালিমদেরকে। ফলে তারা তাদের ঘরে ঘরে উপুড় হয়ে পড়েছিল।
11-95 : অবস্থা এমন হয়েছিল, যেনো তারা কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। সাবধান! মাদায়েনবাসী ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল যেমন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সামুদ জাতি।
11-96 : আমরা মূসাকে পাঠিয়েছিলাম আমাদের নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে,
11-97 : ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে। কিন্তু তারা ফেরাউনের নির্দেশের অনুসরণ করে, অথচ ফেরাউনের নির্দেশ ন্যায্য ছিলনা।
11-98 : কিয়ামতের দিন সে তার (অনুগামী) কওমের সামনে সামনেই থাকবে এবং তাদের নিয়ে প্রবেশ করবে জাহান্নামে। যেখানে তাদের প্রবেশ করানো হবে তা কতো যে নিকৃষ্ট জায়গা!
11-99 : এই দুনিয়ায় এবং কিয়ামতের দিনেও তাদেরকে লানতের অনুগামী করা হয়েছে। তাদেরকে যে পুরস্কার দেয়া হবে, তা কতো যে নিকৃষ্ট পুরস্কার!
11-100 : এ হলো জনপদসমূহের সংবাদ যা আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি। সেগুলোর মধ্যে কিছু (জনপদের চি‎হ্ন‎‎) এখনো বিদ্যমান আছে, আর কিছু হয়ে গেছে বিলীন।
11-101 : আমরা তাদের প্রতি যুলুম করিনি, বরং তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল। তাদের উপর যখন আমাদের শাস্তির ফায়সালা এসেছিল, তখন তারা আল্লাহকে ছাড়া যাদের ডাকতো সেই সব ইলাহরা তাদের কিছুমাত্র কাজে আসেনি। তারা তাদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়ায়নি।
11-102 : কোনো জনপদ যখন যুলুম করতে থাকে, তখন তোমার প্রভু তাদেরকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। তাঁর শাস্তি বড়ই কঠিন বেদনাদায়ক।
11-103 : এর মধ্যে রয়েছে নিদর্শন তাদের জন্যে, যারা আখিরাতের আযাবকে ভয় পায়। সেদিন সব মানুষকে জমা করা হবে এবং সেটাই হবে উপস্থিতির দিন।
11-104 : সেটাকে আমরা একটা নির্দিষ্ট কালের জন্যে স্থগিত রেখেছি মাত্র।
11-105 : সে দিনটি যখন আসবে তখন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউই কথা বলতে পারবে না। তাদের মধ্যে কিছু লোক হবে হতভাগ্য আর কিছু লোক হবে ভাগ্যবান।
11-106 : হতভাগারা থাকবে জাহান্নামে। সেখানে তাদের জন্যে থাকবে কেবল চিৎকার আর আর্তনাদ।
11-107 : সেখানেই স্থায়ীভাবে পড়ে থাকবে তারা যতোদিন মহাকাশ ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না তোমার প্রভু অন্য কিছু চান। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু যা চান তাই করেন।
11-108 : আর যারা হবে ভাগ্যবান, তারা থাকবে জান্নাতে। চিরকাল তারা সেখানে (উপভোগ করতে) থাকবে, যতোদিন বিদ্যমান থাকবে মহাকাশ ও পৃথিবী, যদি না তোমার প্রভু ভিন্ন কিছু চান। এ এক অনন্ত অবিরাম পুরস্কার।
11-109 : সুতরাং তারা যে সবের ইবাদত করে সেগুলোর ভ্রান্ত বাতিল হবার ব্যাপারে তুমি মোটেও সংশয়ে থেকোনা। আগে তাদের বাপ - দাদারা যাদের ইবাদত করতো তারাও তাদেরই ইবাদত করে। আমরা অবশ্যি তাদের প্রাপ্য অংশ কিছুমাত্র কম না করে পুরোপুরি দেবো।
11-110 : আমরা মূসাকেও কিতাব দিয়েছিলাম এবং তা নিয়েও মতভেদ করা হয়েছিল। তোমার প্রভুর পূর্ব ফায়সালা না থাকলে তাদের মাঝেও মীমাংসা হয়ে যেতো। তারা অবশ্যি এ (কিতাব) নিয়ে ভ্রান্তিকর সংশয়ের মধ্যে ছিলো।
11-111 : যখন নির্ধারিত সময়টি আসবে, তখন অবশ্যি তোমার প্রভু তাদের প্রত্যেককে তার আমলের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন। তারা যা আমল করে সে বিষয়ে তিনি পুরোপুরি অবহিত।
11-112 : সুতরাং তোমাকে যে রকম নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার উপর কায়েম থাকো তুমি এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারা, আর সীমালংঘন করোনা। তোমরা যা আমল করো সবই তাঁর দৃষ্টিপথে রয়েছে।
11-113 : যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়োনা, তাহলে তোমাদের স্পর্শ করবে জাহান্নামের আগুন এবং আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের আর কোনো অলি থাকবে না, আর তোমাদেরকে সাহায্যও করা হবেনা।
11-114 : সালাত কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে (অর্থাৎ ফজর এবং যোহর, আসর ও মাগরিব) এবং রাতের প্রথমাংশে (অর্থাৎ এশার সালাত)। নিশ্চয়ই পুণ্য মিটিয়ে দেয় পাপকে। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্যে একটি উপদেশ।
11-115 : সবর অবলম্বন করো। অবশ্যি আল্লাহ্ বিনষ্ট করেন না পূণ্যবানদের কর্মফল।
11-116 : আমরা তোমাদের পূর্ব প্রজন্মের যাদের রক্ষা করেছিলাম, তাদের স্বল্প সংখ্যক ছাড়া বাকিরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করতে নিষেধ করতো না কেন? যালিমরা সে সময়েরই অনুসরণ করতো যাতে সুখ - স্বাচ্ছন্দ পেতো। আসলে তারা ছিলো অপরাধী।
11-117 : অধিবাসীরা সংশোধনকামী থাকা অবস্থায় তোমার প্রভু অন্যায়ভাবে কোনো জনপদকে ধ্বংস করেন না।
11-118 : তোমার প্রভু চাইলে সব মানুষকে এক উম্মত বানাতে পারতেন। কিন্তু তারা বিভেদকারীই থেকে যাবে।
11-119 : তবে তোমার প্রভু যাদের রহম করেন তারা ছাড়া। আর তিনি এ জন্যেই তাদের সৃষ্টি করেছেন। ‘আমি অবশ্যি জিন এবং ইনসানকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করবো’ - তোমার প্রভুর এ ঘোষণা পূর্ণ হবেই।
11-120 : (পূর্বের) রসূলদের এসব সংবাদ আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি এ জন্যে, যেনো এর মাধ্যমে আমরা তোমার হৃদয়কে দৃঢ় করি, আর এর মাধ্যমে তোমার কাছে এসেছে সত্য (ইতিহাস)। তাছাড়া এটি হলো মুমিনদের জন্যে উপদেশ এবং সতর্কবাণী।
11-121 : যারা ঈমান আনেনা, তাদের বলে দাও: ‘‘তোমাদের অবস্থানে থেকে তোমরা তোমাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাও, আমরাও করে যাবো আমাদের কাজ।
11-122 : আর তোমরা অপেক্ষা করো, আমরাও থাকলাম অপেক্ষায়।’’
11-123 : মহাকাশ এবং পৃথিবীর গায়েব তো আল্লাহ্ই জানেন। সকল বিষয় তাঁরই কাছে রুজু হয়। সুতরাং তুমি তাঁরই ইবাদত করো এবং তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করো। তোমরা যা করো সে বিষয়ে তোমার প্রভু গাফিল নন।