আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 15, আল হিজর - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 15, আল হিজর



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা : ৯৯, রুকু সংখ্যা: ০৬

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৮ইসলাম বিরোধীদের কামনা, ধারণা ও কর্মপন্থা।
০৯-১৫কুরআন হিফাযতের দায়িত্ব আল্লাহর। সব রসূলের সাথেই লোকেরা বিদ্রূপ করেছে।
১৬-২৫আল্লাহর সৃষ্টি ও বিশ্ব ব্যবস্থাপনা।
২৬-৫০মানুষ ও জ্বিন সৃষ্টির উপাদান। মানুষের সাথে শয়তানের শত্রুতার সূচনা ও ইতিহাস। শয়তান কাদেরকে প্রতারিত করতে পারবে এবং কাদেরকে করতে পারবেনা? মুত্তাকিদের শুভ পরিণতি।
৫১-৬০ইবরাহিমের কাছে ফেরেশতাদের আগমন এবং তাকে একটি সুসংবাদ ও একটি দুঃসংবাদ প্রদান।
৬১-৭৯লুত জাতির অপকর্ম এবং তাদের পরিণতির ইতিহাস।
৮০-৮৪আইকাবাসীদের অবাধ্যতা এবং তাদের করুণ পরিণতি।
৮৫-৯৯কিয়ামতের আগমন অনিবার্য। নবীকে বারবার পাঠ্য সাত আয়াত এবং আল কুরআনুল আযিম দেয়া হয়েছে। নবীর প্রতি উপদেশ।
15-1 : আলিফ - লাম - রা। এগুলো আয়াত আল কিতাব এবং সুস্পষ্ট কুরআনের।
15-2 : কাফিররাও কখনো কখনো আকাঙ্খা করে, যদি তারা মুসলিম হতো!
15-3 : তাদের উপেক্ষা করো: তারা খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং তাদের আশা - আকাঙ্খা তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখুক। অচিরেই তারা জানতে পারবে।
15-4 : আমরা যে কোনো জনপদকেই হালাক করেছি, তার অবশ্যি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদকাল রেকর্ড করা ছিলো।
15-5 : কোনো উম্মতের (ধ্বংসের) মেয়াদকাল এগিয়েও আসেনা এবং পিছিয়েও যায়না।
15-6 : তারা বলে: ‘‘হে ঐ ব্যক্তি, যার প্রতি আয - যিকির (আল - কুরআন) নাযিল করা হয়েছে, তুমি অবশ্যি একজন পাগল।
15-7 : তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে আমাদের কাছে ফেরেশতা নিয়ে আসোনা কেন?’’
15-8 : আমরা তো বাস্তব পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া ছাড়া ফেরেশতা পাঠাইনা; আর যখনই ফেরেশতা পাঠাই তখন আর তাদের অবকাশ দেয়া হয়না।
15-9 : আয - যিকির (আল - কুরআন) আমরাই নাযিল করেছি এবং আমরাই সেটির হিফাযতকারী।
15-10 : তোমার আগেকার অনেক সম্প্রদায়ের কাছেই আমরা রসূল পাঠিয়েছিলাম।
15-11 : যখনই তাদের কাছে কোনো রসূল এসেছে তারা (তাকে নিয়ে) বিদ্রূপ করেছে
15-12 : এভাবে আমরা (সর্বকালের) অপরাধীদের অন্তরে তা (কুফুরি ও হঠকারিতা) সঞ্চার করি।
15-13 : তারা এর (কুরআনের) প্রতি ঈমান আনেনা। আর অতীতের (অপরাধীদের) সুন্নতও ছিলো এটাই।
15-14 : আমরা যদি তাদের জন্যে আসমানের দুয়ারও খুলে দিতাম এবং তারা যদি দিবালোকে তাতে মেরাজ (আরোহণ) করতেও থাকতো,
15-15 : তখনো তারা বলতো, আমাদের চোখকে সম্মোহিত করা হয়েছে, বরং আমরা জাদুগ্রস্ত লোক।
15-16 : আমরা আসমানে বুরুজ (গ্রহ - নক্ষত্র) স্থাপন করেছি এবং সেগুলোকে দর্শকদের জন্যে শোভামন্ডিত করেছি।
15-17 : এবং প্রতিটি অভিশপ্ত শয়তান থেকে সেটিকে হিফাযত করেছি।
15-18 : তবে কেউ যদি চুরি করে সংবাদ শুনতে চায় তার পশ্চাদধাবন করে উজ্জ্বল শিহাব (শিখা)।
15-19 : আর পৃথিবী, আমরা তাকে সমতল করে বিছিয়ে দিয়েছি, আর তাতে স্থাপন করেছি পাহাড় - পর্বত এবং তাতে উৎপন্ন করেছি প্রতিটি জিনিস ওজন মতো (যথাযথ পরিমাণে)।
15-20 : তাতে ব্যবস্থা করে দিয়েছি তোমাদের জীবিকার, এবং তাদের জীবিকারও যাদের জীবিকাদাতা তোমরা নও।
15-21 : এমন কোনো জিনিস নেই, আমাদের কাছে যার ভান্ডার রক্ষিত নেই। আমরা তা নাযিল করি জ্ঞাত নির্দিষ্ট পরিমাণে।
15-22 : আর আমরা বর্ষণমুখী মেঘবাহী বাতাস পাঠাই, তারপর আসমান থেকে নাযিল করি পানি এবং তা তোমাদের পান করাই, অথচ তোমরা তো সেই (পানি) ভান্ডারের মালিক নও।
15-23 : আমরাই হায়াত দেই এবং মউত ঘটাই এবং আমরাই ওয়ারিশ (মালিক)।
15-24 : আমরা তোমাদের বিগতদের জানি এবং যারা আসবে তাদেরও জানি।
15-25 : নিশ্চয়ই তোমার প্রভু তাদের সবার হাশর করবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী।
15-26 : আমরা সৃষ্টি করেছি মানুষকে গন্ধযুক্ত কাদার শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে।
15-27 : আর তাদের আগে আমরা জিনদের সৃষ্টি করেছি শিখাযুক্ত আগুন থেকে।
15-28 : (স্মরণ করো,) যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি গন্ধযুক্ত কাদার শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে।
15-29 : আমি যখন তাকে সুগঠিত করবো এবং আমার পক্ষ থেকে তাতে রূহ সঞ্চার করে দেবো, তখন তোমরা তার প্রতি সাজদায় নুয়ে পড়বে।
15-30 : ফলে ফেরেশতারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে সাজদা করে।
15-31 : তবে করেনি শুধু ইবলিস। সে সাজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হতে অস্বীকার করে।
15-32 : আল্লাহ বললেন: ‘হে ইবলিস! তোর কী হয়েছে, তুই কেন সাজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হইস্নি?’
15-33 : সে বললো: ‘‘আমি তো এমন একজনকে সাজদা করতে পারিনা, যাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন গন্ধযুক্ত কাদার শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে।’
15-34 : তিনি বললেন: ‘‘তুই ওখান থেকে বেরিয়ে যা, কারণ তুই অভিশপ্ত।
15-35 : প্রতিদান দিবস পর্যন্ত বর্ষিত হবে তোর উপর লা’নত।’’
15-36 : সে বললো: ‘প্রভু! আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।’
15-37 : তিনি বললেন: ‘‘যা, তুই তাদের অন্তরভুক্ত যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে।
15-38 : অবধারিত সময়টির (কিয়ামত) আগমন পর্যন্ত।’’
15-39 : সে বললো: ‘‘প্রভু! যেহেতু আপনি আমাকে বিপথগামী করেছেন, সে জন্যে আমি পৃথিবীতে তাদের (মানুষের) জন্যে বিপথগামিতাকে চাকচিক্যময় করে তুলবো এবং তাদের সবাইকে বিপথগামী করে ছাড়বো।
15-40 : তবে তাদের মধ্যকার আপনার মুখলেস বান্দাদের কথা ভিন্ন।’’
15-41 : আল্লাহ্ বললেন: ‘‘এটাই আমার কাছে পৌঁছার সরল সঠিক পথ।
15-42 : আমার দাসদের উপর তোর কোনো কর্তৃত্ব খাটবেনা, তবে বিভ্রান্তদের যারা তোর অনুসরণ করবে তাদের কথা ভিন্ন।
15-43 : অবশ্যি তাদের সবার প্রতিশ্রুত স্থান হলো জাহান্নাম।
15-44 : তার আছে সাতটি দরজা, প্রত্যেক দরজার জন্যে তাদের একটি অংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
15-45 : অবশ্যি মুত্তাকিরা থাকবে উদ্যানসমূহ এবং ঝরণাধারা সমূহের মধ্যে।
15-46 : তাদের বলা হবে: ‘দাখিল হও শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে।’
15-47 : তাদের অন্তরে পরস্পরের জন্যে কোনো বিদ্বেষ থাকলে তা আমরা দূর করে দেবো, তারা পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসন গ্রহণ করবে ভাই ভাই হিসেবে।
15-48 : সেখানে তাদের স্পর্শ করবেনা কোনো অবসাদ এবং সেখান থেকে তাদের বের করেও দেয়া হবেনা।
15-49 : আমার দাসদের সংবাদ দাও, নিশ্চয়ই আমি মহাক্ষমাশীল, মহাদয়াময়।
15-50 : আর আমার আযাব, তাও বেদনাদায়ক আযাব।
15-51 : তাদের আরো সংবাদ দাও ইবরাহিমের মেহমানদের সম্পর্কে।
15-52 : তারা যখন তার কাছে প্রবেশ করেছিল, বলেছিল: ‘সালাম’। সে বলেছিল: ‘আমরা আপনাদের আগমনে আতংকিত।’
15-53 : তখন তারা বলেছিল: ‘আপনি আতংকিত হবেন না, আমরা আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছি এক জ্ঞানী পুত্রের।’
15-54 : সে বলেছিল: ‘আপনারা আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন আমি বার্ধক্যে উপনীত হওয়া সত্ত্বেও। আপনারা কীভাবে সুসংবাদ দিচ্ছেন?’
15-55 : তারা বলেছিল: ‘আমাদের দেয়া সুসংবাদ সত্য। আপনি নিরাশ হবেন না।’
15-56 : সে বলেছিল: ‘বিভ্রান্তরা ছাড়া কে নিরাশ হয় তার প্রভুর রহমত থেকে?’
15-57 : তারপর সে বললো: ‘(হে ফেরেশতারা!) আপনাদের আর কী বক্তব্য?’
15-58 : তারা বললো: ‘‘আমরা প্রেরিত হয়েছি এক অপরাধী কওমের প্রতি,
15-59 : তবে, লুতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা তাদের সবাইকে নাজাত দেবো।
15-60 : কিন্তু তাঁর (লুতের) স্ত্রীকে নয়। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সে ধবংস হবার জন্যে পেছনে পড়ে থাকাদের অন্তরভুক্ত হবে।’’
15-61 : অত:পর ফেরেশতারা যখন লুত পরিবারে এসে উপস্থিত হলো।
15-62 : সে (লুত) বললো: ‘আপনাদের তো চিনতে পারছিনা?’
15-63 : তারা বললো: ‘‘তারা (আপনার জাতি) যে বিষয়ে সন্দেহ করছে আমরা আপনার কাছে তাই নিয়ে এসেছি।
15-64 : আমরা সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যি আমরা সত্যবাদী।
15-65 : সুতরাং আপনি রাতের কোনো এক সময় আপনার পরিবার - পরিজনকে নিয়ে বের হয়ে পড়ুন। আপনি তাদের পেছনে চলুন এবং আপনাদের কেউই যেনো পেছনে ফিরে না তাকায়। আপনাদেরকে যেখানে বলা হয়েছে সেখানে চলে যান।’’
15-66 : আমরা তাকে ফায়সালা জানিয়ে দিলাম যে, প্রভাতেই তাদের শিকড় কেটে দেয়া হবে (সমূলে বিনাশ করা হবে)।
15-67 : নগরবাসীরা (মেহমান আগমনের সংবাদে) উল্লসিত হয়ে (লুতের বাড়িতে) এসে উপস্থিত হয়।
15-68 : সে বললো: ‘‘এরা আমার মেহমান, তোমরা আমাকে বেইজ্জতি করোনা।
15-69 : তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আমাকে অপমানিত করোনা।’’
15-70 : তারা বললো: আমরা কি জগতবাসীকে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনি?
15-71 : লুত বললো: এই যে আমার (জাতির) কন্যারা রয়েছে, তোমরা কিছু করতে চাইলে তাদের বিয়ে করে নাও।
15-72 : তোমার জীবনের শপথ, তারা তখন উন্মত্ততায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল।
15-73 : তারপর সূর্যোদয়ের সময় তাদের পাকড়াও করে বিকটধ্বনি।
15-74 : তখন আমরা (লুত জাতির) জনপদের উপরের দিক নিচে করে উল্টে দিয়েছি এবং তাদের উপর অবিরাম বর্ষণ করেছি পাথরের কংকর।
15-75 : বিশ্লেষণ শক্তিসম্পন্ন লোকদের জন্যে এতে রয়েছে নিদর্শন।
15-76 : সেই বিরান জনপদ লোক চলাচলের পথপাশে এখনো বিদ্যমান।
15-77 : মুমিনদের জন্যে তাতে রয়েছে এক নিদর্শন।
15-78 : আর আইকাবাসীরাও ছিলো সীমালংঘনকারী।
15-79 : তাদের থেকেও আমরা প্রতিশোধ নিয়েছি। উভয় বিরানভূমিই প্রকাশ্য মহাসড়কের পাশে এখনো বিদ্যমান।
15-80 : হিজরবাসীরাও রসূলদের মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
15-81 : আমরা তাদের দিয়েছিলাম আমাদের নিদর্শনসমূহ, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল।
15-82 : তারা পাহাড় কেটে বাসস্থান নির্মাণ করেছিল নিরাপদ থাকার জন্যে।
15-83 : তাদেরকেও প্রভাতকালেই আঘাত করেছিল এক মহাবিকট শব্দ।
15-84 : তাদের অর্জনসমূহ তাদের কোনো উপকারই করতে পারেনি।
15-85 : মহাকাশ আর পৃথিবী এবং এই দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে সবই আমরা সৃষ্টি করেছি বাস্তবতার ভিত্তিতে। কিয়ামত অবশ্যি আসবে। তাই তুমি সুন্দর সৌজন্যবোধের সাথে তাদের উপেক্ষা করো।
15-86 : নিশ্চয়ই তোমার রব মহাস্রষ্টা, অতীব জ্ঞানী।
15-87 : আমরা তোমাকে দিয়েছি পুন: পুন: আবৃত্ত সাত (আয়াত) এবং মহাগ্রন্থ আল - কুরআন।
15-88 : আমরা তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ বিলাসের যেসব উপকরণ দিয়েছি, সেগুলোর প্রতি তুমি কখনো তোমার দুই চোখ মেলে তাকিয়োনা। তাদের জন্যে তুমি দুঃখও করোনা। তুমি মুমিনদের জন্যে তোমার দুই ডানা অবনমিত করে দাও।
15-89 : তুমি বলো: ‘আমি তো কেবল সুস্পষ্ট সতর্ককারী।’
15-90 : (এটা ঠিক সেরকম) যেভাবে আমরা নাযিল করেছিলাম সেইসব বিভক্তকারীদের (ইহুদি ও খৃস্টানদের) উপর,
15-91 : যারা তাদের কুরআনকে (তাওরাতকে) বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে।
15-92 : তোমার প্রভুর শপথ! আমরা অবশ্যি তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো,
15-93 : তাদের কর্মকান্ডের বিষয়ে।
15-94 : তোমাকে যার আদেশ করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে প্রচার করো এবং মুশরিকদের উপেক্ষা করে চলো।
15-95 : বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে তোমার জন্যে আমরাই কাফী (যথেষ্ট),
15-96 : যারা আল্লাহর সাথে অপর ইলাহ্ বানিয়ে নিয়েছে। অচিরেই তারা জানতে পারবে।
15-97 : আমরা জানি, তাদের কথায় তোমার মন সংকুচিত হয়ে আসে।
15-98 : সুতরাং তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসার সাথে তসবিহ করো এবং তুমি সাজদাকারীদের অন্তরভুক্ত।
15-99 : এবং তোমার প্রভুর ইবাদত করো যতোক্ষণ না তোমার কাছে আসে নিশ্চিত জিনিসটি (মৃত্যু)।