আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 33, আহযাব (বাহিনী সমূহ) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 33, আহযাব (বাহিনী সমূহ)



মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৭৩, রুকু সংখ্যা: ০৯

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৮মুনাফিকদের আনুগত্য করার নিষেধাজ্ঞা। মুখবোলা ছেলেরা পুত্র নয়, তারা দীনি ভাই। নবীর স্ত্রীরা মুমিনদের মা। আল্লাহ্ সকল নবীর কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন।
০৯-২৭আহযাব যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যের বিবরণ। মুনাফিকদের পলায়ন ও মুনাফিকি। মুমিনদের আদর্শ আল্লাহর রসূল। মুমিনদের কর্মনীতি। ইহুদিদের মদিনা থেকে উৎখাত।
২৮-৩৪নবীর স্ত্রীদের জন্য উপদেশ ও বিশেষ বিধান।
৩৫-৩৬মুমিনদের বিশেষ গুণাবলি।
৩৭-৪৮নবীকে মুখবোলা পুত্রের স্ত্রী বিয়ে না করার ভ্রান্ত রসম ভাঙ্গার নির্দেশ, ফলে আল্লাহর নির্দেশে তিনি যায়েদের তালাক দেয়া স্ত্রীকে বিয়ে করেন। কারণ নবী ইসলামি আদর্শের প্রতীক।
৪৯তালাকের কিছু বিধান।
৫০-৫২নবীর জন্য চারের অধিক বিয়ে বৈধ, নবী কাদেরকে বিয়ে করতে পারবেন।
৫৩-৬২নবীর ঘরে দাওয়াত খাওয়া এবং নবীর স্ত্রীদের কাছে কিছু চাওয়ার প্রটোকল। নবীর পরে নবীর স্ত্রীদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ। পর্দার কিছু বিধান।
৬৩-৭৩কিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে। পরকালে কাফিরদের দুরবস্থা। মুমিনদেরকে মূসার উম্মতের মতো আচরণ করার নিষেধাজ্ঞা। মুমিনদের প্রতি উপদেশ। মানুষের উপর আল্লাহর আমানতের ভার বহনের দায়িত্ব অর্পণের কারণ।
33-1 : হে নবী! আল্লাহকে ভয় করো এবং কাফির আর মুনাফিকদের আনুগত্য করোনা। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী প্রজ্ঞাবান।
33-2 : তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যে অহি করা হচ্ছে তার ইত্তেবা করো। নিশ্চয়ই তোমরা যা আমল করো আল্লাহ্ তার খবর রাখেন।
33-3 : আর তাওয়াক্কুল করো আল্লাহর উপর। উকিল হিসেবে তোমার জন্যে আল্লাহ্ই কাফী।
33-4 : আল্লাহ্ বানাননি কোনো ব্যক্তির জন্যে তার অভ্যন্তরে দুটি অন্তর। আর তোমরা তোমাদের যেসব স্ত্রীর সাথে যিহার করো আল্লাহ্ তাদেরকে তোমাদের মা বানাননি এবং তোমাদের মুখডাকা পুত্রদেরকেও বানাননি তোমাদের পুত্র। এগুলো তো তোমাদের মুখের কথা। আল্লাহ্ সত্য কথা বলেন এবং দেখান সঠিক পথ।
33-5 : তোমরা তাদের ডাকো তাদের পিতার পরিচয়ে। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই ন্যায়সংগত। তোমরা যদি তাদের পিতার পরিচয় জানতে না পারো, তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই এবং বন্ধু। ইতোপূর্বে তোমরা এ ব্যাপারে যে ভুল করেছো সেটার জন্যে তোমাদের অপরাধ ধরা হবেনা। তবে অপরাধ হতে পারে তোমাদের অন্তরের সংকল্পের কারণে। আর আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল দয়াবান।
33-6 : এই নবী (মুহাম্মদ) মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীরা তাদের মা। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজিরদের চেয়ে আত্মীয়রা পরস্পরের নিকটতর। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি আনুকূল্য দেখাতে চাও, তাতে কোনো দোষ নেই। এসব বিধান কিতাবে লিপিবদ্ধ।
33-7 : স্মরণ করো, যখন আমরা নবীদের কাছ থেকে তাদের অংগীকার নিয়েছিলাম এবং তোমার থেকেও, নূহের থেকেও, ইবরাহিম, মূসা এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম থেকেও। আমরা তাদের থেকে গ্রহণ করেছিলাম শক্ত অংগীকার,
33-8 : সত্যপন্থীদেরকে তাদের সত্য পথে অটল থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে। তিনি কাফিরদের জন্যে তৈরি করে রেখেছেন বেদনাদায়ক আযাব।
33-9 : হে ঈমানদার লোকেরা! যিকির করো তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের কথা, যখন তোমাদের দিকে শত্রুবাহিনী১ এসে গিয়েছিল, তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম ঝড়ো হাওয়া এবং এমন এক বাহিনী, যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। তোমরা যা করো তা আল্লাহর দৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে।
33-10 : যখন তারা এসেছিল তোমাদের উপরের দিক থেকে এবং নিচের দিক থেকে এবং (তাদের দেখে) তোমাদের চোখ বিস্ফারিত হয়ে পড়েছিল এবং তোমাদের প্রাণ হয়ে পড়েছিল কণ্ঠাগত আর তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে করছিলে নানা রকম ধারণা।
33-11 : এখানেই পরীক্ষা করা হয়েছিল মুমিনদের। তাঁরা কেঁপে উঠেছিল ভীষণ কম্পনে।
33-12 : এ অবস্থায় মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ ছিলো, তারা বলছিল: ‘আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল আমাদের যে ওয়াদা দিয়েছেন, সেটা একটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
33-13 : তখন তাদেরই একটি দল বলেছিল: ‘হে ইয়াসরিববাসী! এখানে তোমাদের কোনো স্থান নেই, তোমরা ফিরে চলো।’ তাদের আরেকদল নবীর কাছে অব্যাহতির প্রার্থনা করে বলছিল: ‘আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত’, অথচ তাদের বাড়িঘর অরক্ষিত ছিলনা। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিলো ভেগে যাওয়া।
33-14 : শত্রুরা যদি চারদিক থেকে (মদিনা) আক্রমণ করতো এবং তাদেরকে বিদ্রোহের জন্যে প্ররোচিত করতো, তারা কালবিলম্ব না করে সহজেই তা করতো।
33-15 : অথচ ইতোপূর্বে তারা আল্লাহর সাথে অংগীকার করেছিল, তারা পিছু হটবে না। আল্লাহর সাথে অংগীকার সম্পর্কে অবশ্যি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
33-16 : হে নবী! বলো: তোমাদের কোনোই ফায়দা হবেনা যদি তোমরা মউত কিংবা কতল হবার ভয়ে পলায়ন করো। তবে সেক্ষেত্রে তোমাদেরকে ভোগের সুযোগ খুব কমই দেয়া হবে।
33-17 : বলো: কে তোমাদের রক্ষা করবে আল্লাহর থেকে যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল করার এরাদা করেন? অথবা তিনি যদি তোমাদের মঙ্গল করার এরাদা করেন, তবে কে তোমাদের ক্ষতি করবে? তারা নিজেদের জন্যে আল্লাহর পরিবর্তে কোনো অলি কিংবা সাহায্যকারী পাবেনা।
33-18 : আল্লাহ্ অবশ্যি জানেন তোমাদের মধ্যে কারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী, আর কারা তাদের ভাইদের বলে: ‘আমাদের সাথে আসো।’ তারা যুদ্ধে অংশ নেয়না, সামান্য ছাড়া।
33-19 : তোমাদের প্রতি সংকীর্ণ মনোভাবের কারণে। যখন ভয়ের সময় আসে, তুমি তাদের দেখো, মরণের ভয়ে মূর্ছা যাওয়া ব্যক্তির মতো তারা চোখ উল্টিয়ে তোমার দিকে তাকায়। আবার যখন ভয় চলে যায় তখন সম্পদের লোভে তারা তোমাদের প্রতি ভাষার তীর নিক্ষেপ করে। এরা ঈমান আনেনি। ফলে, আল্লাহ্ তাদের আমল বিনষ্ট করে দিয়েছেন, আর এটা আল্লাহর জন্যে খুবই সহজ।
33-20 : তারা ধারণা করছিল সম্মিলিত বাহিনী চলে যায়নি। সম্মিলিত বাহিনী যদি আবার এসে পড়ে, তখন তারা কামনা করবে যে, ভালো হতো তারা যদি বেদুঈনদের সাথে থেকে তোমাদের খোঁজখবর নিতো! তোমাদের মাঝে অবস্থান করলেও তারা যুদ্ধ করতো সামান্যই।
33-21 : তোমাদের যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও শেষ দিনের সাফল্যের আশা করে এবং আল্লাহ্ বেশি বেশি যিকির করে তাদের জন্যে আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।
33-22 : মুমিনরা যখন সম্মিলিত বাহিনী দেখেছিল, তারা বলে উঠেছিল: ‘এর ওয়াদাই তো আল্লাহ এবং তাঁর রসূল আমাদের দিয়েছেন এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল সত্য বলেছেন।’ ফলে তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল।
33-23 : একদল মুমিন আল্লাহর সাথে করা তাদের অংগীকার সত্যে পরিণত করেছে, তাদের কেউ কেউ নিজের নজরানা পূর্ণ করেছে, আর কিছু সংখ্যক অপেক্ষায় আছে। তারা তাদের নীতি কিছুমাত্র বদলায়নি।
33-24 : যাতে করে আল্লাহ্ সত্যপন্থীদের পুরস্কৃত করেন তাদের সত্যবাদিতার জন্যে, আর ইচ্ছা করলে মুনাফিকদের শাস্তি দেন, কিংবা তাদের তওবা কবুল করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, অতীব দয়াবান।
33-25 : আল্লাহ্ কাফিরদের ফিরিয়ে দিলেন তাদের ক্ষোভসহ। তারা কোনো ফায়দা হাসিল করেনি। যুদ্ধে মুমিনদের জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। আর আল্লাহ্ অতীব শক্তিধর মহাপরাক্রমশালী।
33-26 : আহলে কিতাবদের (ইহুদিদের) যারা তাদের সাহায্য করেছিল, আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের দুর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ঢুকিয়ে দিলেন ভয়। এখন তোমরা তাদের কিছু সংখ্যককে হত্যা করছো আর কিছু সংখ্যককে করছো বন্দী।
33-27 : আর তিনি তোমাদেরকে ওয়ারিশ বানিয়ে দিলেন তাদের জমিন, ঘরবাড়ি ও মাল - সম্পদের এবং এমন ভূমির যাতে তোমরা কখনো আগমন করোনি। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
33-28 : হে নবী! তোমার স্ত্রীদের বলো: ‘‘তোমরা যদি দুনিয়ার জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করো, তবে আসো আমি তোমাদের ভোগ - বিলাসের সামগ্রী দিয়ে সুন্দরভাবে বিদায় করে দেই।
33-29 : আর যদি তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে চাও এবং আখিরাত চাও, সেক্ষেত্রে আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যকার কল্যাণপরায়ণ নারীদের জন্যে প্রস্ত্তত রেখেছেন মহাপুরস্কার।’’
33-30 : হে নবীর স্ত্রীরা! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি সুস্পষ্ট ফাহেশা কাজ করে, তার আযাব (দন্ড) করা হবে দ্বিগুণ এবং এটা আল্লাহর জন্যে খুবই সহজ।
33-31 : আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের জন্যে বিনয়ী হবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তাকে আমরা পুরস্কার দেবো দুইবার, আর তার জন্যে আমরা প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক জীবিকা।
33-32 : হে নবীর স্ত্রীরা! তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পর পুরুষের সাথে এমন ললিত কণ্ঠে কথা বলোনা, যাতে করে এমন কোনো ব্যক্তি প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে যার অন্তরে রোগ আছে। তোমরা প্রচলিত পন্থায় যথাযথ কথা বলো।
33-33 : তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করো। তোমরা পূর্বের জাহেলি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবেনা, সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। আল্লাহ্ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে হে আহলে বাইত (নবীর পরিবার) এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পাক পবিত্র করতে।
33-34 : তোমরা যিকির করো (আলোচনা ও পাঠ করো) তোমাদের ঘরে যে আল্লাহর আয়াত ও হিকমতের কথা তিলাওয়াত করা হয়, তা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতীব সূক্ষ্মদর্শী ও গভীরভাবে জ্ঞাত।
33-35 : নিশ্চয়ই মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সওম পালনকারী পুরুষ ও সওম পালনকারী নারী, যৌনাংগ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌনাংগ হিফাযতকারী নারী, বেশি বেশি আল্লাহর যিকিরকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহ্ এদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন মাগফিরাত আর শ্রেষ্ঠ প্রতিদান।
33-36 : আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল কোনো বিষয়ে ফায়সালা দেয়ার পর সে বিষয়ে কোনো মুমিন পুরুষ বা নারীর ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। যে কেউ আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলকে অমান্য করবে, সে হবে সুস্পষ্ট বিপথগামী।
33-37 : স্মরণ করো, আল্লাহ্ যাকে (যায়েদকে) অনুগ্রহ করেছেন এবং তুমিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছো, তুমি তাকে বলছিলে: ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখো এবং আল্লাহকে ভয় করো।’ তুমি তোমার মনে যে কথা গোপন রাখছো আল্লাহ্ সে কথা প্রকাশ করে দিচ্ছেন। তুমি ভয় করছো, পাছে লোক কিছু বলে। অথচ তোমার জন্যে অধিকতর সংগত হলো আল্লাহকে ভয় করা। তারপর যায়েদ যখন তার (যয়নবের) সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করলো, তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম, যাতে করে মুমিনদের মুখডাকা পুত্ররা নিজেদের স্ত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করলে সেসব নারীদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে মুমিনরা কোনো প্রকার সংকোচ না করে। আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যি কার্যকর হতে হবে।
33-38 : আল্লাহ্ নবীর জন্যে যা ফরয (আইন সংগত) করে দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে তার কোনো বাধা নেই। যেসব নবী অতীত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিলো আল্লাহর সুন্নত (নিয়ম)। আর আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যি একটি সুনিশ্চিত ফায়সালা।
33-39 : তারা আল্লাহর রিসালাত (বার্তা) পৌঁছে দিতো, তাঁকে ভয় করতো এবং তাঁকে ছাড়া আর কাউকেও ভয় করতো না। আর হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহ্ই কাফী (যথেষ্ট)।
33-40 : মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নয়, বরং আল্লাহর রসূল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞাত।
33-41 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে যিকির করো বেশি বেশি যিকির,
33-42 : এবং তাঁর তসবিহ্ করো সকাল আর সন্ধ্যায় ।
33-43 : তিনি তোমাদের প্রতি সালাত (রহমত ও অনুগ্রহ) করেন আর তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের জন্যে তাঁর রহমত প্রার্থনা করে তোমাদেরকে অন্ধকাররাশি থেকে বের করে আলোতে নিয়ে আসার জন্যে। তিনি মুমিনদের প্রতি অতীব দয়াবান।
33-44 : যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে ‘সালাম’ এবং তিনি তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান।
33-45 : হে নবী! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে,
33-46 : আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী হিসেবে এবং এক উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে।
33-47 : তুমি মুমিনদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে বিরাট অনুগ্রহ।
33-48 : তুমি কাফির এবং মুনাফিকদের আনুগত্য করোনা, তাদের দেয়া কষ্ট উপেক্ষা করো, আর তাওয়াক্কুল করো আল্লাহর উপর। আর উকিল হিসেবে আল্লাহ্ই কাফী।
33-49 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা মুমিন নারীদের বিয়ে করার পর, তাদের স্পর্শ করার আগেই যদি তালাক দাও, সেক্ষেত্রে তোমাদের জন্যে তাদের কোনো ইদ্দত পালন করতে হবেনা, যা তোমরা গণনা করবে। এ অবস্থায় তোমরা তাদেরকে কিছু অর্থ সামগ্রী দেবে এবং সুন্দরভাবে তাদের বিদায় করবে।
33-50 : হে নবী! আমরা তোমার জন্যে হালাল করেছি তোমার স্ত্রীদের, যাদের তুমি মোহরানা দিয়ে বিয়ে করেছো এবং হালাল করেছি ফায় হিসেবে আল্লাহ্ তোমাকে যা দিয়েছেন তা থেকে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে। (এছাড়া তোমার জন্যে বিয়ে করা হালাল করেছি) তোমার চাচার কন্যাদের, তোমার ফুফুর কন্যাদের, তোমার মামার কন্যাদের, তোমার খালার কন্যাদের - যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে। আর যে নারী নিজেকে বিয়ে করার জন্যে নবীর কাছে নিবেদন (offer) করে এবং নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে (তাকে বিয়ে করাও হালাল করেছি)। এ বৈধতা বিশেষভাবে তোমার জন্যে, অন্য মুমিনদের জন্যে নয়, যাতে করে তোমার কোনো অসুবিধা না হয়। মুমিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীদের ব্যাপারে যে বিধান (আগেই) দিয়েছি২, তা আমি জানি। আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, অতীব দয়াবান।
33-51 : তুমি তাদের (নিজ স্ত্রীদের) যাকে ইচ্ছা (নিয়ম মাফিক) দূরে রাখতে পারো এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারো। আর তুমি যাকে দূরে রেখেছো তাকে কামনা করলে তোমার কোনো অপরাধ হবেনা। এটাই সহজতর, যাতে তোমার স্ত্রীদের চক্ষু শীতল হয়, তারা দুঃখ না পায় এবং তুমি যা দেবে তাতে তাদের প্রত্যেকেই সন্তুষ্ট থাকে। আল্লাহ্ জানেন তোমাদের অন্তরে কী আছে? আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী, সহনশীল।
33-52 : এর পর তোমার জন্যে আর কোনো নারীকে বিয়ে করা বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তন করে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টিদাতা।
33-53 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত খাবার প্রস্তুতির জন্যে অপেক্ষা না করে খাবার গ্রহণের জন্যে নবীর ঘরে প্রবেশ করোনা। তবে যখন ডাকা হয় তখন প্রবেশ করো। আর যখনই খাবার গ্রহণ শেষ হয়, তখন চলে যেয়ো কথাবার্তায় মশগুল না হয়ে। কারণ তোমাদের এ ধরণের আচরণ নবীকে কষ্ট দেয় এবং তোমাদের উঠিয়ে দিতে সে সংকোচ বোধ করে। তবে আল্লাহ্ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না। তোমরা নবী পত্নীদের কাছে কিছু চাইলে হিজাবের অন্তরাল থেকে চাইবে। এ পন্থাই তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্র। তোমাদের কারো জন্যে সংগত নয় আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর কখনো তাঁর স্ত্রীদের বিয়ে করা। আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের এসব কাজে জড়ানো গুরুতর অপরাধ।
33-54 : তোমরা কোনো কিছু প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো, জেনে রাখো, আল্লাহ্ সব বিষয়ে জ্ঞানী।
33-55 : তবে তাদের (নবীর স্ত্রীদের) জন্যে দোষ হবেনা (হিজাব না করলে) তাদের পিতা, কিংবা সন্তান, কিংবা ভাই, অথবা ভাইয়ের ছেলে, নতুবা বোনের ছেলে, তাদের সেবিকা এবং অধিকারভুক্ত দাসদাসীদের সামনে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী।
33-56 : নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর নবীর প্রতি সালাত (অনুগ্রহ, অনুকম্পা, মর্যাদাদান) করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা নবীর জন্যে সালাত (অনুগ্রহ) প্রার্থনা করে। হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরাও নবীর জন্যে সালাত (অনুগ্রহ ও মর্যাদা) প্রার্থনা করো এবং তাঁকে যথার্থভাবে সালাম জানাও।
33-57 : নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ দুনিয়া এবং আখিরাতে তাদের লা’নত করেন এবং তাদের জন্যে তিনি প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক আযাব।
33-58 : যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ এবং নারীদের কষ্ট দেয়, তারা নিজেদের ঘাড়ে বহন করে অপবাদ এবং সুস্পষ্ট পাপের বোঝা।
33-59 : হে নবী! তোমার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিনদের নারীদের বলো, তারা যেনো তাদের চাদরের অংশ তাদের উপর টেনে দেয়। এতে করে তাদের পরিচয় জানতে সহজতর হবে এবং তাদের উত্যক্ত করা হবেনা। আল্লাহ্ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।
33-60 : মুনাফিকরা, যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা, আর যারা শহরে গুজব রটায় তারা নিজেদের অপতৎপরতা থেকে বিরত না হলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা তোমাকে প্রবল করে তুলবো, তারপর এই নগরীতে তারা তোমার প্রতিবেশি হিসেবে খুব কম সময়ই থাকতে পারবে।
33-61 : অভিশপ্ত হবে তারা। যেখানেই তাদের পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং হত্যা করা হবে হত্যা করার মতো।
33-62 : যারা অতীত হয়েছে, তাদের ব্যাপারেও এটাই ছিলো আল্লাহর সুন্নত (নিয়ম), তুমি কখনো আল্লাহর সুন্নতে পরিবর্তন পাবেনা।
33-63 : লোকেরা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বলো: ‘সেটার জ্ঞান আল্লাহর কাছেই রয়েছে।’ সেটা তুমি জানবে কী করে? হয়তো বা কিয়ামত খুব শীঘ্রি অনুষ্ঠিত হবে।
33-64 : আল্লাহ্ লা’নত করেছেন কাফিরদের এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন জ্বলন্ত আগুন।
33-65 : সেখানেই থাকবে তারা অনন্তকাল। তারা কোনো অলিও পাবেনা, সাহায্যকারীও পাবেনা।
33-66 : যেদিন তাদের মুখমন্ডল আগুনে ওলটপালট করা হবে, সেদিন তারা বলবে: ‘‘হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রসূলকে মেনে চলতাম!’
33-67 : তারা আরো বলবে: ‘আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নেতা এবং মুরুব্বিদের আনুগত্য করেছি, কিন্তু তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছে,
33-68 : আমাদের প্রভু! তুমি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দাও, আর তাদের লা’নত করো গুরুতর লা’নত।’’
33-69 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা ঐসব লোকদের মতো হয়োনা, যারা মূসাকে কষ্ট দিয়েছিল। তারা যা রটিয়েছিল, আল্লাহ্ তা থেকে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন এবং সে ছিলো আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান।
33-70 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সরল সঠিক কথা বলো।
33-71 : (তাহলে) তিনি তোমাদের জন্যে ইসলাহ করে দেবেন তোমাদের আমল এবং ক্ষমা করে দেবেন তোমাদের অপরাধ। যে কেউ আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, অবশ্যি সে সাফল্য অর্জন করবে মহাসাফল্য।
33-72 : আমরা মহাকাশ, পৃথিবী এবং পাহাড় - পর্বতের কাছে এই আমানত পেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা তা বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং শংকিত হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষ তা বহন করলো। সে তো ভীষণ যালিম, অতিরিক্ত অজ্ঞ।
33-73 : পরিণামে আল্লাহ্ আযাব দেবেন মুনাফিক পুরুষ আর মুনাফিক নারীদের এবং মুশরিক পুরুষ আর মুশরিক নারীদের। আর আল্লাহ্ তওবা কবুল করবেন মুমিন পুরুষ আর মুমিন নারীদের এবং আল্লাহ্ তো পরম ক্ষমাশীল অতীব দয়াবান আছেনই।