আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 37, আস্ সাফফাত (সফে দাঁড়ানো) - Aajan.com

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 37, আস্ সাফফাত (সফে দাঁড়ানো)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১৮২, রুকু সংখ্যা: ০৫

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-৭৪তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের ব্যাপারে লোকদের অস্বীকৃতি ও অভিযোগ। অস্বীকারকারীদের পরকালীন দুরবস্থা।
৭৫-৮২দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্ নূহ আ.-এর দোয়া কবুল করেন।
৮৩-১১৩ভাস্কর্য পূজারীদের বিরুদ্ধে ইবরাহিমের অকাট্য যুক্তি। ইবরাহিমের অগ্নি পরীক্ষা। পুত্র কুরবানির স্বপ্ন। পশু কুরবানির সূচনা।
১১৪-১২২মূসা ও হারূণের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ।
১২৩-১৩২নিজ কওমের প্রতি ইলিয়াসের দাওয়াত। তাঁর জাতি কর্তৃক তাঁকে প্রত্যাখ্যান।
১৩৩-১৩৮লুত আ.-এর মুক্তি ও তাঁর জাতির ধ্বংস। তাদের ধ্বংসের নিদর্শনসমূহ এখনো বর্তমান।
১৩৯-১৪৮অবাধ্য জাতি থেকে ইউনুসের পলায়ন। তিমির গ্রাস হন ইউনুস। আল্লাহ্ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখেন। পুনরায় জাতির কাছে তাঁর আগমন। এবার তাঁর জাতি ঈমান আনে।
১৪৯-১৮২শিরকের পক্ষে কোনো প্রমাণ নাই। নবীরা আল্লাহর সাহায্য পাবেন।
37-1 : শপথ সেইসব (ফেরেশতাদের) যারা সফে (সারিতে) দাঁড়ানো।
37-2 : শপথ সেইসব (ফেরেশতাদের) যারা মেঘমালা পরিচালনাকারী।
37-3 : শপথ সেইসব (ফেরেশতাদের), যারা তিলাওয়াত করে বা বহন করে আনে আল কুরআন (আল্লাহর নিকট থেকে)।
37-4 : নিশ্চয়ই তোমাদের ইলাহ এক ও একক।
37-5 : তিনিই মালিক মহাকাশ ও পৃথিবীর এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর, আর তিনিই মালিক উদয়াচলের।
37-6 : আমরা দুনিয়ার আকাশকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি নক্ষত্ররাজি দিয়ে,
37-7 : এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে।
37-8 : ফলে তারা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু শুনতে পায়না এবং তাদের আঘাত করা হয় সবদিক থেকে
37-9 : তাদের তাড়ানোর জন্যে। আর তাদের জন্যে রয়েছে অবিরাম আযাব।
37-10 : তবে হঠাৎ কেউ কিছু শুনে ফেললে তার পেছনে ছুটে যায় জ্বলন্ত উল্কা পিন্ড।
37-11 : তাদের (কাফিরদের) জিজ্ঞেস করো, তারাই কি মজবুত সৃষ্টি, নাকি আমরা অন্য যাদের সৃষ্টি করেছি তারা? এদেরকে তো আমরা সৃষ্টি করেছি আঠাল মাটি দিয়ে।
37-12 : তুমি তো বিস্ময়বোধ করছো, অথচ তারা করছে বিদ্রূপ।
37-13 : তাদের যখন উপদেশ দেয়া হয়, তারা সেদিকে মনোযোগ দেয়না।
37-14 : যখনই তারা কোনো নিদর্শন দেখে, উপহাস করে।
37-15 : তারা বলে: ‘‘এ তো এক পরিষ্কার ম্যাজিক ছাড়া কিছু নয়।
37-16 : আমরা যখন মরে যাবো এবং মাটি ও অস্থিমজ্জায় পরিণত হবো, তখন কি আমাদের পুনরায় উঠানো হবে?
37-17 : আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকেও?’’
37-18 : বলো: ‘হ্যাঁ, আর তখন তোমরা হবে লাঞ্ছিত।’
37-19 : সেটা হবে একটা প্রচন্ড শব্দ, আর তখনই তারা তা দেখতে পাবে।
37-20 : তারা আরো বলবে: ‘হায় ধ্বংস আমাদের, এটা তো প্রতিফল দিবস।’
37-21 : (তখন তাদের বলা হবে:) ‘এটা হলো ফায়সালার দিন, যে দিনটিকে তোমরা করছিলে অস্বীকার।’
37-22 : (ফেরেশতাদের বলা হবে:) এনে জমা করো যালিমদের, তাদের সাথি সংগিদের এবং তাদের উপাস্যদের, যাদের তারা ইবাদত করতো
37-23 : আল্লাহর পরিবর্তে। তাদের পরিচালিত করো জাহান্নামের দিকে।
37-24 : তবে তাদের থামাও, কারণ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
37-25 : তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করছো না কেন?
37-26 : বরং তারা সেদিন আত্মসমর্পণ করে দেবে।
37-27 : তারা একে অপরের সামনা সামনি হয়ে পরস্পরকে প্রশ্ন করবে,
37-28 : তারা বলবে: ‘তোমরা তো ডান দিক থেকে (তোমাদের শক্তি দেখিয়ে) আমাদের কাছে আসতে।’
37-29 : তারা জবাবে বলবে: ‘‘তোমরা তো নিজেরাই বিশ্বাসী ছিলে না,
37-30 : আর তোমাদের উপর আমাদের কোনো কর্তৃত্বও ছিলনা। বরং তোমরা ছিলে আল্লাদ্রোহী লোক।
37-31 : তাই আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রভুর কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যি শাস্তি ভোগ করতে হবে।
37-32 : আমরা তোমাদের বিপথগামী করেছিলাম, কারণ আমরা নিজেরাও ছিলাম বিপথগামী।’’
37-33 : সেদিন তারা সবাই শরিকদার হবে আযাবের।
37-34 : আমরা অপরাধীদের সাথে এ রকমই আচরণ করি।
37-35 : তাদের যখন বলা হতো: ‘কোনো ইলাহ নেই আল্লাহ্ ছাড়া’, তখন তারা হঠকারিতা প্রদর্শন করতো।
37-36 : তারা বলতো: ‘আমরা কি একজন পাগল কবির জন্যে আমাদের ইলাহদের পরিত্যাগ করবো?’
37-37 : বরং সে তো সত্য নিয়ে এসেছে এবং (অতীত) রসূলদের সত্য বলে মেনে নিয়েছে।
37-38 : তোমরা অবশ্যি আস্বাদন করবে বেদনাদায়ক আযাব।
37-39 : এবং তোমরা যেসব কর্মকান্ড করতে সেগুলোরই প্রতিদান পাবে।
37-40 : তবে তারা নয়, যারা আল্লাহর বাছাই করা দাস।
37-41 : তাদের জন্যে রয়েছে পরিচিত রিযিক।
37-42 : রয়েছে ফলফলারি, আর তারা হবে সম্মানিত,
37-43 : জান্নাতুন নায়ীমে (নিয়ামতে ভরা জান্নাতে)।
37-44 : সেখানে তারা উপবেশন করবে মুখোমুখি আসনে।
37-45 : তাদের ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে (মদের) পেয়ালা বহমান ঝরণা থেকে
37-46 : শুভ্র সাদা শরাব, যা হবে পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু।
37-47 : তাতে ক্ষতিকর কিছু থাকবে না এবং তাতে মাতালও হবেনা কেউ।
37-48 : তাদের কাছে থাকবে আনত নয়না এবং আয়তলোচনা নারীরা।
37-49 : সেসব নারীরা হবে যেনো সযত্নে লালিত সাদা ডিম।
37-50 : তারা পরস্পরের সামনাসামনি হয়ে প্রশ্ন করবে।
37-51 : তাদের কেউ কেউ বলবে: (দুনিয়ায়) আমার ছিলো এক সাথি,
37-52 : সে বলতো তুমি কি একথায় বিশ্বাসী যে:
37-53 : ‘আমরা যখন মরে যাবো এবং মাটি ও অস্থিমজ্জায় পরিণত হবো, তখন কি আমাদের প্রতিফল দেয়া হবে?’
37-54 : কেউ একজন বলবে: তোমরা কি দেখতে চাও সে এখন কোথায়?
37-55 : তখন সে ঝুঁকে পড়ে দেখবে এবং তাকে দেখতে পাবে জাহান্নামের মাঝ বরাবর।
37-56 : সে তাকে বলবে: ‘আল্লাহর কসম, তুমি তো আমাকে প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছিলে।
37-57 : যদি আমার প্রভুর অনুগ্রহ না হতো, তাহলে তো আমিও (জাহান্নামে) হাজির করা লোকদের অন্তরভুক্ত হতাম।’
37-58 : সে বলবে: ‘তাহলে কি আমাদের আর মৃত্যু হবেনা
37-59 : প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদের কি আযাবও দেয়া হবেনা?’
37-60 : নিশ্চয়ই এ হলো মহাসাফল্য।
37-61 : এ রকম সাফল্যের জন্যেই কর্মীদের কাজ করা উচিত।
37-62 : আতিথ্য হিসেবে এটা ভালো, নাকি যাক্কুম গাছ?
37-63 : যালিমদের জন্যে আমরা এ গাছটি সৃষ্টি করেছি ফিতনা হিসেবে।
37-64 : সেটি এমন একটি গাছ, যা উৎপন্ন হয় জাহান্নামের তলদেশ থেকে।
37-65 : সেটার মোচা দেখতে যেনো শয়তানের মাথা।
37-66 : তারা অবশ্যি তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে ভর্তি করবে পেট।
37-67 : তার উপর তাদের জন্যে থাকবে পুঁজ মিশ্রিত টগবগে ফুটন্ত পানি।
37-68 : তাদের গন্তব্য পথ হবে অবশ্যি জাহান্নামের দিকে।
37-69 : সেখানে তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের দেখতে পাবে বিপথগামী,
37-70 : এবং তারা তাদের পদাংক অনুসরণ করে চলেছিল।
37-71 : তাদের আগেও আগেকার অধিকাংশ লোকই বিপথগামী হয়েছিল।
37-72 : আমরা তাদের মাঝে পাঠিয়েছিলাম সতর্ককারী।
37-73 : সুতরাং চেয়ে দেখো, যাদের সতর্ক করা হয়েছিল, কী জঘন্য পরিণতি হয়েছে তাদের?
37-74 : তবে আল্লাহর বাছাই করা বান্দাদের কথা ভিন্ন।
37-75 : নূহ আমাদের ডেকেছিল, আর আমরা ডাকে কতোইনা উত্তম সাড়াদানকারী!
37-76 : আমরা তাকে এবং তার পরিবার পরিজনকে উদ্ধার করেছিলাম মহাসংকট থেকে।
37-77 : তার বংশধরদেরই আমরা অবশিষ্ট রেখেছি (প্রজন্মের পর প্রজন্ম)।
37-78 : আমরা তার (সুনাম) স্মরণীয় করে রেখেছি পরবর্তীদের মাঝে।
37-79 : সমগ্র জগতের মধ্যে নূহের প্রতি ‘সালাম’ (শান্তি বর্ষিত হোক)।
37-80 : এভাবেই আমরা পুরস্কৃত করে থাকি কল্যাণপরায়ণদের।
37-81 : সে ছিলো আমার মুমিন বান্দাদের একজন।
37-82 : তারপর বাকি সবাইকে আমরা ডুবিয়ে দিয়েছি পানিতে।
37-83 : আর তার অনুগামীদেরই একজন ছিলো ইবরাহিম।
37-84 : সে তার প্রভুর কাছে উপস্থিত হয়েছিল প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে।
37-85 : সে তার পিতা এবং তার কওমকে বলেছিল: ‘‘আপনারা কিসের ইবাদত (উপাসনা) করছেন?
37-86 : আপনারা কি আল্লাহর পরিবর্তে মনগড়া ইলাহদের চান?
37-87 : ‘রাববুল আলামিনের’ (বিশ্বজগতের প্রভুর) ব্যাপারে আপনাদের ধারণা কী?’’
37-88 : অত:পর সে একবার তারকারাজির দিকে তাকালো
37-89 : এবং বললো: ‘আমি অসুস্থ।’
37-90 : তখন তারা তাকে ফেলে চলে গেলো।
37-91 : অত:পর সে সতর্কভাবে তাদের ইলাহ (দেবতা) গুলোর কাছে গেলো। তাদের বললো: ‘তোমরা কি খাবেনা?’
37-92 : ‘তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা কথা বলোনা কেন?’
37-93 : তারপর সে তাদের আঘাত হানলো শক্তভাবে।
37-94 : তখন লোকেরা ছুটে এলো তার দিকে।
37-95 : সে বললো: ‘‘তোমরা নিজেরা যেগুলোকে খোদাই করে তৈয়ার করো, তোমরা কি সেগুলোরই পূজা করো?
37-96 : অথচ তোমাদের তো সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ্ এবং তোমরা যা তৈরি করো সেগুলোকেও।’’
37-97 : তারা বললো: ‘তার জন্যে ঘেরাও করা প্রাচীরের একটা ইমারত নির্মাণ করো। অতপর তাকে সেই অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করো।’
37-98 : তখন তারা তার বিরুদ্ধে এক চরম চক্রান্ত করে, কিন্তু আমরা তাদের নিচু করে দিয়েছি।
37-99 : সে বলেছিল: ‘‘আমি আমার প্রভুর দিকে চললাম, তিনি আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন।
37-100 : আমার প্রভু! আমাকে একটি যোগ্য সন্তান দান করো।’’
37-101 : তখন আমরা তাকে সুসংবাদ দিলাম এক স্থির বুদ্ধিসম্পন্ন পুত্র সন্তানের।
37-102 : যখন সে তার পিতার সাথে কাজ করার বয়েসে উপনীত হয়, তখন সে (ইবরাহিম) বলেছিল: ‘আমার পুত্র! আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমি তোমাকে যবেহ্ করছি। এখন তুমি বলো এ বিষয়ে তোমার অভিমত কী?’ সে বলেছিল: ‘আব্বু! আপনাকে যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে আপনি তাই করুন। ইনশাল্লাহ (আল্লাহ্ চাইলে) আপনি আমাকে পাবেন ধৈর্যশীল।’
37-103 : যখন তারা দুজনই আত্মসমর্পণ করলো এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলো,
37-104 : তখন আমরা তাকে ডেকে বললাম: ‘হে ইবরাহিম!
37-105 : অবশ্যি তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছো। আমরা এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি পুণ্যবানদের।
37-106 : নিশ্চয়ই এটা ছিলো একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা।
37-107 : অত:পর আমরা তাকে মুক্ত করেছিলাম এক মহাকুরবানির বিনিময়ে।
37-108 : আর আমরা পরবর্তীদের মধ্যেও এই কুরবানির রীতি চালু রেখেছি।
37-109 : সালাম (শান্তি বর্ষিত হোক) ইবরাহিমের প্রতি।
37-110 : পুণ্যবানদের আমরা এভাবেই পুরস্কৃত করি।
37-111 : সে ছিলো আমাদের বিশ্বাসী দাসদের একজন।
37-112 : তারপর আমরা তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম (পুত্র) ইসহাকের। সেও ছিলো একজন যোগ্য নবী।
37-113 : আমরা বরকত দান করেছিলাম তাকে এবং ইসহাককেও। তাদের বংশধরদের মধ্যে কিছু কল্যাণপরায়ণ লোকও আছে, আর কিছু আছে নিজেদের প্রতি সুস্পষ্ট যুলুমকারীও।
37-114 : আমরা ইহসান করেছিলাম মূসা এবং হারূণের প্রতি,
37-115 : এবং আমরা নাজাত দিয়েছিলাম তাদেরকে এবং তাদের কওমকে মহাসংকট থেকে।
37-116 : আমরা তাদের সাহায্য করেছিলাম, ফলে তারাই হয়েছিল বিজয়ী।
37-117 : আমরা তাদের উভয়কে দিয়েছিলাম সুবিস্তারিত কিতাব।
37-118 : উভয়কেই পরিচালিত করেছিলাম সিরাতুল মুসতাকিমে (সরল সঠিক পথে)।
37-119 : পরবর্তীদের মাঝে তাদের খ্যাতি সংরক্ষণ করেছি।
37-120 : সালাম মূসা এবং হারূণের প্রতি।
37-121 : আমরা এভাবেই পুরস্কৃত করি পুণ্যবানদের।
37-122 : তারা উভয়েই ছিলো আমাদের বিশ্বাসী দাসদের অন্তরভুক্ত।
37-123 : নিশ্চয়ই ইলিয়াসও ছিলো রসূলদের একজন।
37-124 : স্মরণ করো, সে তার কওমকে বলেছিল: ‘‘তোমরা কি সতর্ক হবেনা?
37-125 : তোমরা কি বা’আল (দেবতা) - কেই ডাকবে, আর পরিত্যাগ করবে সর্বশ্রেষ্ঠ স্রষ্টা
37-126 : আল্লাহকে, যিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষদেরও রব?’’
37-127 : কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রত্যাখ্যান করে। সুতরাং তাদেরকে অবশ্যি (শাস্তির জন্যে) হাজির করা হবে।
37-128 : তবে আমাদের মুখলিস (নিষ্ঠাবান) বান্দাদের কথা ভিন্ন।
37-129 : আমরা তাকে স্মরণীয় করে রেখেছি পরবর্তীদের মাঝে।
37-130 : সালাম ইলয়াসিনের (ইলিয়াসের) প্রতি।
37-131 : এভাবেই আমরা পুরস্কৃত করি কল্যাণপরায়ণদের।
37-132 : সে ছিলো আমাদের বিশ্বাসী দাসদের একজন।
37-133 : নিশ্চয়ই লুতও ছিলো রসূলদের একজন।
37-134 : আমরা তাকে এবং তার পরিবার পরিজন সবাইকে নাজাত দিয়েছিলাম
37-135 : এক বৃদ্ধাকে ছাড়া। সে ছিলো পেছনে পড়াদের একজন।
37-136 : (তাদের নাজাত দিয়ে) বাকিদের আমরা ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।
37-137 : তোমরা তাদের ধ্বংসাবশেষগুলো অতিক্রম করো সকালে
37-138 : এবং রাত্রে। তবু কি তোমরা আকল খাটাবেনা?
37-139 : ইউনুস অবশ্যি রসূলদের একজন।
37-140 : স্মরণ করো, যখন সে পালিয়ে এসে বোঝাই করা নৌযানের কাছে পৌঁছালো।
37-141 : তারপর সে লটারিতে যোগ দিলো এবং পরাজিত হলো।
37-142 : (ফলে তারা তাকে ফেলে দিলো দরিয়ায়) এবং একটা বিশাল মাছ তাকে গিলে ফেললো। তখন সে নিজেকে তিরস্কার করতে থাকলো।
37-143 : সে যদি আল্লাহর তসবিহ ঘোষণাকারী না হতো,
37-144 : তাহলে তাকে তার পেটেই থাকতে হতো পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।
37-145 : তখন আমরা তাকে নিক্ষেপ করলাম এক তরুলতাবিহীন প্রান্তরে এবং তখন ভীষণ অসুস্থ ছিলো সে।
37-146 : আমরা তার উপর উদগত করে দিলাম একটি লাউ গাছ।
37-147 : তারপর আমরা তাকে পুনরায় পাঠালাম এক লাখ বা তার চাইতে বেশি লোকের জনপদে।
37-148 : তখন তারা ঈমান আনলো, ফলে আমরা তাদেরকে কিছু কালের জন্যে জীবন ভোগ করতে দিয়েছিলাম।
37-149 : এখন তুমি তাদের জিজ্ঞেস করো: সব কন্যা সন্তান কি তোমার প্রভুর জন্যে, আর তাদের জন্যে কি সব পুত্র সন্তান?
37-150 : নাকি আমরা ফেরেশতাদের নারী করে সৃষ্টি করেছি এবং এ ব্যাপারে তারা ছিলো প্রত্যক্ষদর্শী?
37-151 : সাবধান, তারা কথা রচনা করে বলে:
37-152 : ‘আল্লাহ্ সন্তান জন্ম দিয়েছেন।’ আসলে তারা চরম মিথ্যাবাদী।
37-153 : তিনি কি পুত্র সন্তানের পরিবর্তে কন্যা সন্তান বেছে নিয়েছেন?
37-154 : তোমাদের হয়েছে কী, তোমাদের এ কেমন বিচার?
37-155 : তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?
37-156 : নাকি তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে?
37-157 : তবে তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে তোমাদের কিতাব নিয়ে আসো।
37-158 : তারা আল্লাহ্ এবং জিনদের মাঝেও আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থির করে। অথচ জিনরা জানে, অবশ্যি তাদেরকে হাজির করা হবে বিচারের জন্যে।
37-159 : তারা আল্লাহর প্রতি যা আরোপ করে তিনি তা থেকে পবিত্র, মহান।
37-160 : তবে আল্লাহর মুখলিস (একনিষ্ঠ) বান্দারা তা করে না।
37-161 : জেনে রাখো, তোমরা নিজেরা এবং তোমরা যাদের ইবাদত (পূজা, উপাসনা) করো, তারা (সবাই মিলে)
37-162 : তোমরা কাউকেও আল্লাহর ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
37-163 : কেবল জাহিমে (জাহান্নামে) প্রবেশকারীকে ছাড়া।
37-164 : (ফেরেশতারা বলে:)! ‘‘আমাদের প্রত্যেকের জন্যেই রয়েছে নির্ধারিত স্থান।
37-165 : আমরা অবশ্যি সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান।
37-166 : আমরা অবশ্যি আল্লাহর তসবিহ্ (পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব) ঘোষণাকারী।’’
37-167 : তারা তো বলে আসছে:
37-168 : ‘‘আগেকার কিতাবের মতো কোনো কিতাব যদি আমাদের কাছে থাকতো,
37-169 : তবে অবশ্যি আমরা আল্লাহর মুখলিস (নিষ্ঠাবান) বান্দা হয়ে যেতাম।’’
37-170 : কিন্তু তারা সেটির (কুরআনের) প্রতি কুফুরি করলো, এখন অচিরেই তারা জানতে পারবে (এর পরিণাম)।
37-171 : আমার রসূলদের ব্যাপারে আমার এই ফায়সালা পূর্ব থেকেই স্থির হয়ে আছে যে,
37-172 : তারা অবশ্যি সাহায্যপ্রাপ্ত হবে,
37-173 : এবং আমাদের বাহিনীই হবে বিজয়ী।
37-174 : সুতরাং কিছুকালের জন্যে তুমি তাদের উপেক্ষা করে চলো।
37-175 : এবং তাদের পর্যবেক্ষণ করতে থাকো, শীঘ্রি তারা দেখতে পাবে।
37-176 : তারা কি আমাদের আযাব দ্রুত করার কামনা করে?
37-177 : তাদের আঙিনায় যখন আযাব নেমে আসবে, তখন তারা দেখতে পাবে, যাদের সতর্ক করা হয়েছে তাদের সকাল বেলাটা কতো নিকৃষ্ট!
37-178 : সুতরাং কিছু কালের জন্যে তাদের উপেক্ষা করো।
37-179 : এবং পর্যবেক্ষণ করো। অচিরেই তারা দেখতে পাবে (তাদের পরিণতি)।
37-180 : তারা তাঁর প্রতি যা আরোপ করে, তা থেকে তোমার প্রভু পবিত্র ও মহান এবং সকল ক্ষমতার অধিকারী।
37-181 : এবং সালাম রসূলদের প্রতি।
37-182 : আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাববুল আলামিনের জন্যে।